Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Rehabilitation

পুনর্বাসন আটকে জমি-জটে

বারবার ধস। বিপত্তি বাড়ছে শিল্পাঞ্চলে। পুনর্বাসনের দিকে তাকিয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বাসিন্দা। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি এই কাজ। ধস-পরিস্থিতি, পুনর্বাসন, কাজ শেষ না হওয়ার কারণ কী, কী বলছে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ— খোঁজ নিল আনন্দবাজার। ২০১৬-য় রাজ্যের আবাসন দফতরকে পুনর্বাসন প্রকল্প এলাকায় বাড়ি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজ্যের তৎকালীন আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ওই বছর ৪ নভেম্বর প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০২:১৭
Share: Save:

এক বছর আগেই ধস কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জেলায় রয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। রয়েছে জমি-জটও।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ‘‘সেই সময়ে (২০০৯) কোন কোন এলাকায়, কত জন পুনর্বাসন পাবেন, সে তালিকা করা হয়। এলাকার সমীক্ষা করা হয়। সালানপুর, বারাবনি ও জামুড়িয়ায় প্রায় ৩,১৫০ একর সরকারি খাস জমি খুঁজে আবাসন তৈরির তোড়জোড় হয়। কিন্তু ২০১১-য় রাজ্যের পালাবদলের পরে, আর এই কাজ এগোয়নি।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘কয়লা মন্ত্রক টাকা দিলেও সে টাকা এখনও ব্যবহার করে এলাকাবাসীকে পুনর্বাসন দিতে তৃণমূল সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ।’’

যদিও ‘গড়িমসি’র অভিযোগ মানছেন না তৃণমূল নেতারা। ২০১৬-য় রাজ্যের আবাসন দফতরকে পুনর্বাসন প্রকল্প এলাকায় বাড়ি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজ্যের তৎকালীন আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ওই বছর ৪ নভেম্বর প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। দরপত্র ডেকে ঠিকা সংস্থাকে দিয়ে শুরু হয় আবাসন তৈরির কাজ, দাবি দফতরের। এডিডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বারাবনির দাসকেয়ারি, জামুড়িয়ার বিজয়নগরে প্রায় ১২ হাজার বাড়ি তৈরির কাজ প্রায় শেষ।’’ কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি কেন? এ প্রসঙ্গে উজ্জ্বলবাবুর মন্তব্য, ‘‘ভূগর্ভে কয়লা নেই, এমন খাসজমির সন্ধান চলছে।’’

কিন্তু এই ‘জমি’-র প্রশ্নেই রয়েছে জট, জানা যায় প্রশাসন সূত্রে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সামডি, সালানপুর, বনজেমাহারির ধস কবলিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য সালানপুরের নামোকেশিয়ায় প্রায় ২৬ একর সরকারি খাসজমির সন্ধান মেলে। কিন্তু সেখানে আবাসন তৈরির কাজ শুরু হতে স্থানীয়দের বাধায় কাজ থমকে রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এলাকার কয়েকটি আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দারা শতাধিক বছর ওই জমিতে চাষাবাদ করেন। তাই,= প্রকল্পের জন্য জমি ছাড়া হবে না। যদিও জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজির আশ্বাস, ‘‘স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত সমাধানসূত্র বার করা হবে। ধস কবলিতদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে বৈঠক করে স্থির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

পাশাপাশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এডিডিএ-র কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে খাস জমি মিললেও ইসিএল-এর ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন দরকার এই শংসাপত্র? বিষয়টি নিয়ে ইসিএল-এর সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘খনি এলাকায় ভূগর্ভস্থ কয়লার মালিক ইসিএল। মাটির তলায় কয়লা থাকলে ইসিএল তা খনন করে তুলবে। তাই যেখানে ভূগর্ভে কয়লা থাকবে, সেখানে নির্মাণকাজ করা যায় না।’’ যদিও, ইসিএল-এর অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে যে সব এলাকায় ভূগর্ভে ছ’শো মিটার বা তারও গভীরে কয়লা রয়েছে, সেখানে আগামী ৫০ বছরেও কয়লা খননের সম্ভাবনা নেই। ফলে সেখানে শংসাপত্র দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ সব শুনে ফের পুনর্বাসনের দাবিতে ‘আন্দোলন’-কেই পথ বলছেন কেউ-কেউ। তেমনই একজন ডিসেরগড় ভিলেজ কমিটির বিমান মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আসানসোলে এডিডিএ-এর সদর কার্যালয়ে পুনর্বাসনের দাবিতে লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভ করব আমরা।’’ (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rehabilitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE