Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Subrata Mukherjee

Subrata Mukherjee death: ‘ওঁর চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছি না’

বন্ধুরা তো বটেই ‘কাছের মানুষ’কে হারিয়ে গোটা ন’পাড়ারই মন খারাপ। চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকানে তাঁকে নিয়েই আলোচনা।

পূর্বস্থলীর ন’পাড়ায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন গ্রামবাসী, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

পূর্বস্থলীর ন’পাড়ায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন গ্রামবাসী, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৩
Share: Save:

গ্রামে এলেই ডেকে নিতেন ছেলেবেলার বন্ধুদের। গল্প-আড্ডা, মাঠে বল পেটানোর স্মৃতি হাতড়ানোতেই কেটে যেত সময়। বন্ধুকে হারিয়ে সেই কথাগুলোই বারবার মনে পড়ছে পূর্বস্থলীর ন’পাড়া গ্রামের তিনকড়ি বৈরাগ্যের। এই গ্রামেই পৈতৃক ভিটে ছিল সদ্য প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। শুক্রবার সেখানেই বন্ধুর ছবি পাশে বসেছিলেন তিনকড়িবাবু।

তাঁর কথায়, ‘‘সন্তুর (সুব্রতবাবুর ডাকনাম) চলে যাওয়াটা কিছুতেই মানতে পারছি না। গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলে এক সঙ্গে পড়তাম। এক বার কাদায় পড়ে গিয়েছিল ও। আমিই টেনে তুলে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলাম। দেখা হলে সে প্রসঙ্গ উঠলেই মন খুলে হাসত। ভাবতে পারছি না, মুখটা আর দেখতে পাব না!’’ মনমরা সামসুল শেখও। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এই গ্রামের স্কুলেই সুব্রতবাবুর সঙ্গে পড়েছেন তিনি। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘হাফ প্যান্ট পরে স্কুলে যাওয়া, হাডুডু খেলার কথা মনে পড়ছে। দেখা হলেই জড়িয়ে ধরত সন্তু। আর নাদনঘাটের জোড়া মণ্ডা ছিল ওর প্রিয়। গ্রামে এলেই মণ্ডা খেতে চাইত।’’

বন্ধুরা তো বটেই ‘কাছের মানুষ’কে হারিয়ে গোটা ন’পাড়ারই মন খারাপ। চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকানে তাঁকে নিয়েই আলোচনা। এক ফালি জমিতে তাঁর ছবিতেও মালা দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুব্রতবাবুর বাবা অশোককুমার মুখোপাধ্যায় স্থানীয় উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সুব্রতবাবু চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁরা ভিটে ছেড়ে চলে যান বজবজে। তবে ঠিকানা বদল হলেও গ্রামকে ভোলেননি তাঁরা। বছর দু’য়েক আগেও দু’কামরার খড়ের চাল দেওয়া বাড়ি ছিল তাঁদের। বর্তমানে অবশ্য জমিটুকুই পড়ে আছে। আর কিছু চাষজমি রয়েছে তাঁদের নামে। প্রতিবেশীরা জানান, সুব্রতবাবুর এক জেঠতুতো দাদা অমিয় মুখোপাধ্যায় ওই বাড়িতে থাকতেন। বছর তিনেক আগে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে ঘর ফাঁকা।

এলাকা পরিদর্শনে সুব্রতবাবু।

এলাকা পরিদর্শনে সুব্রতবাবু। ফাইল চিত্র।

গ্রামে এলেই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিতেন তিনি। শুনতেন সমস্যার কথা। জলকষ্টের কথা শুনে তিনিই জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার মোড়ে মোড়ে নলবাহিত জলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, ন’পাড়া মোড় থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন হয় তাঁর উদ্যোগে। এলাকার বাসিন্দা সনৎ ঘরুই, রবীন্দ্রনাথ কর্মকারেরা বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ অসুবিধায় পড়লেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। অনেকে কলকাতায় গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করে নানা সমস্যা মিটিয়েছেন। কেউ গেলেই জিজ্ঞাসা করতেন, ‘মণ্ডা এনেছিস?’ যে মানুষটার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কথা, তিনি কী ভাবে সব মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন!’’ দয়াময়ী বৈরাগ্য, শিখা প্রামাণিক, শ্যামলী পালেরাও বলেন, ‘‘গ্রামে এলেই সবাইকে হাসিমুখে হাত নাড়তেন। হাসিটা মনে পড়ছে।’’

ওই গ্রামে এ দিন গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘নবদ্বীপ কলেজে ছাত্র রাজনীতি করার সময় থেকে সুব্রতদাকে দেখছি। নাদনঘাটের উন্নয়ন হবে এমন কথা বলে ফেললে, সে কাজ উনি বাকি রাখতেন না। খোলামেলা কথা বলা যেত, আব্দার করা যেত ওঁর কাছে।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘এখানকার হাতে ভাজা মুড়ি আর জোড়া মণ্ডা ওঁর প্রিয় ছিল। কাজের, কাছের মানুষকে হারালাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subrata Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE