ন্যাশনাল গেমসে জোড়া পদক এনেছেন তিনি। ২০২৬ সালে জাপানে এশিয়ান গেমসেও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন কালনা ২ ব্লকের সাতগাছিয়ার সাথী মণ্ডল। শুক্রবার ঘরে ফিরতেই তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন এলাকাবাসী। সাতগাছিয়া উচ্চবিদ্যালয়, স্থানীয় ক্লাব সংবর্ধনাও দেয়।
সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের কাছেই সাথীদের বাড়ি। বাবা শ্যামল মণ্ডল টোটো চালান। মা রুপালি মণ্ডল আয়ার কাজ করেন। একতলা বাড়ির কোথাও দেওয়াল ভাঙা, কোথাও জং ধরা টিন দিয়ে বারান্দায় আড়াল করা। তার মধ্যেই একটি ঘর মেডেল আর ট্রফিতে ঝলমলে। প্রতিবেশীরা জানান, সংসারের অভাব ঘোচাতে সাথীর বাবা মেয়ের নামে একটি আসবাবপত্রের দোকান খুলেছিলেন। গাঁয়ের সেই দোকানে অবশ্য খরিদ্দার হত না তেমন। ফলে ভোর থেকেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে আলো ছিল মেয়েই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই নানা ট্রফি জিততে শুরু করেন সাথী। বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী এ বার উত্তরাখণ্ডে অনুষ্ঠিত ন্যশানাল গেমসে যোগ দেন। প্রথম বারেই ‘ট্র্যাডিশনাল যোগাসনে’ রুপো এবং ‘রিদমিক পেয়ার’ বিভাগে সোনা জেতেন তিনি। এর আগে ২০১৮-১৯ সালে মহারাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল গেমসে ব্রোঞ্জ, ২০১৯-২০তে জাতীয় স্কুল গেমসে দু’টি সোনা, ২০২৩ সালে খেলো ইন্ডিয়া দশকা দমে ব্রোঞ্জ, ২০২২-২৩-এ দিল্লিতে জাতীয় স্কুল গেমসে একটি করে রুপো ও ব্রোঞ্জ এবং ২০২৩ সালে অসমে অস্মিতা উইমেনস লিগে সোনা জেতেন সাথী। ২০২০ সালে কন্যাশ্রী পুরষ্কারও পান।
শুক্রবার মাকে নিয়ে বাঘ এক্সপ্রেসে প্রথমে ব্যান্ডেলে নেমে গাড়ি করে গ্রামে পৌঁছন সাথী। ঢোকার মুখেই নেতাজি সঙ্ঘের মোড় থেকে ব্যান্ড পার্টি স্বাগত জানায় তাঁকে। কিলোমিটার খানেক রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছন তিনি। পড়ুয়ারা মাথায় ফুল ছিটিয়ে নিয়ে যায় তাঁকে। দেওয়া হয় বিশেষ সংবর্ধনা। প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘কী ভাবে লড়াই করে জিততে হয় সাথী তার উদাহরণ। ও অনেকের অণুপ্রেরণা।’’ সাথী তাঁর সাফল্যের কৃতীত্ব দেন দুই কোচ স্বপ্না মণ্ডল, সৌমেন দাস এবং মা-বাবাকে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা না থাকলে এতটা পথ হাঁটা সম্ভব হত না।জাতীয় গেমসের প্রথম খেলায় রুপো জেতার পরে সাহস বাড়ে। দুই কোচ পাশে ছিলেন। সোনা জিতে কেঁদে ফেলেছিলাম।’’
সাথীর মা বলেন, ‘‘মেয়ে হওয়ার পরে অনেকে অনেক কথা শুনিয়েছিল। ওর যখন চার বছর বয়স, তখন থেকেই ওকে সফল করার লড়াই শুরু করি। গয়না বন্ধক দিতে হয়েছে। তবে সোনা জিতে মেয়ে আমার সোনা ফিরিয়ে দিয়েছে।’’ বিকেলে সাথীকে সংবর্ধনা দেয় সংহতি ক্লাব।সেখানে হাজির ছিলেন কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ। তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের আশা সাথী এশিয়ান গেমস থেকেও পদক জয় করবে।’’
সাথীর সাফল্যের বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ‘ড্রিমস নেভার ডাই’ নামে একটি পেজ থেকে পোস্ট করেন তাঁর এক প্রশিক্ষক। সত্যিই কি স্বপ্ন অমর? ছিপছিপেসাথী হাসিমুখে বলেন, ‘‘স্বপ্নকেই তো সত্যি করছি। পরিশ্রম করলেই ছোঁয়া যায় স্বপ্নকে।’’ গাড়ি থেকে নেমে বড়দের প্রণাম করতে করতে এগিয়ে চলে সাথী।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)