E-Paper

গরমের ছুটিতেও খোলা স্কুল

স্কুলের দাবি, এমন উদ্যোগ এ বারই প্রথম নয়। ২০১৮ থেকে তাঁরা গ্রীষ্মের ছুটিতে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খোলা রাখেন।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ১০:১৬
ছুটিতেও খোলা জাহান্নগর জিএসএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়াচ্ছন প্রধান শিক্ষক অমরেশ দেবনাথ।

ছুটিতেও খোলা জাহান্নগর জিএসএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়াচ্ছন প্রধান শিক্ষক অমরেশ দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।

গরমের ছুটিতে তালা পড়েছে স্কুলে। তবে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জাহান্নগর জিএসএফপি বিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ হয়নি। রবিবার বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলিতে স্কুল খুলছে নিয়মিত। বেশ কিছু পড়ুয়াদের নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষিকারা।

স্কুলের দাবি, এমন উদ্যোগ এ বারই প্রথম নয়। ২০১৮ থেকে তাঁরা গ্রীষ্মের ছুটিতে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খোলা রাখেন। প্রত্যন্ত এলাকার এই প্রাথমিক স্কুলে পড়তে আসে জাহান্নগর, পরানপুর, সুলুন্টু গ্রামের পড়ুয়ারা। স্কুলে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৯২। রয়েছেন পাঁচ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা। অঙ্কন এবং কম্পিউটারের জন্য রয়েছেন দু’জন অতিথি শিক্ষক।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫-এ স্কুলের পড়ুয়া ছিল ৯৬ জন। নানা কারণে সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের সংখ্যা কমছে। এই স্কুলটি সেই অর্থে ব্যাতিক্রম। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকেরা ভোর হতেই খেতমজুরের কাজে বাড়ির বাইরে চলে যান। ছেলেমেয়েদের দেখার কেউ নেই। এই সব পরিবারের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণার আগের দিন স্কুল অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে গরিব পড়ুয়াদের অভিভাবকদের আর্জি ছিল, আগের কয়েক বছরের মতো এ বারও গরমের ছুটিতে সকালে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়ানো হোক স্কুলে। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের জন্য রবিবার বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুল খোলা থাকবে। সোম, বুধ, শুক্র পড়ানো হবে প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের। মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনিবার পড়বে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা পালা করে বাংলা, ইংরেজি এবং অঙ্ক শেখান। পাশাপাশি অঙ্কন এবং কম্পিউটারের ক্লাসও হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাঁদা তুলে পড়ুয়াদের জন্য ছোলা, বাদাম, বিস্কুট কেনেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমরেশ দেবনাথ বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া প্রায় ২৫ জন পড়ুয়া নিয়মিত স্কুলে আসছে। তাদের মা-বাবারা সকাল হতেই কাজের তাগিদে বেরিয়ে পড়েন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারেন না। অভিভাবকদের আবেদন মেনে সকালে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্কুল খুলে রাখা হয়েছে।’’ তিনি জানান, পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা স্কুলে যা শেখে, টানা ছুটি থাকায় চর্চার অভাবে তার বেশির ভাগেরই ভুলে যেতে পারে। স্কুল খোলা থাকলে তারা পড়াশোনার মধ্যে থাকতে পারবে।

অভিভাবকেরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। রিনা বাউল দাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘সকাল হতেই কাজের তাগিদে আমাদের বাড়ির বাইরে চলে যেতে হয়। স্কুল দীর্ঘদিন ছুটি থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। আমরা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গরমের ছুটিতে স্কুল খুলে রাখার আবেদন করেছিলাম। নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যে থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তা নেই।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের মতে, এমন কাজ অন্য স্কুলগুলিকেও উৎসাহ জোগাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Purbasthali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy