Advertisement
E-Paper

Teacher: নিরঞ্জনের ক্লাসে খুশি ছাত্রছাত্রীরা

বাঁকুড়ার মামরার বাসিন্দা, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ নিরঞ্জন জানান, ন’বছর বয়সে তাঁর শরীরে দানা বাঁধে কুষ্ঠ রোগ।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১৪
দেওয়াল জুড়ে ‘অ আ...’। জামুড়িয়ার জবাআটপাড়া গ্রামে। শনিবার।

দেওয়াল জুড়ে ‘অ আ...’। জামুড়িয়ার জবাআটপাড়া গ্রামে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।

কোভিড-কড়াকড়ি একটু শিথিল হতেই বার্নপুরের কাঁকরডাঙা কুষ্ঠপল্লির এই ‘স্কুলে’ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষক নিরঞ্জন সর্দারের সৌজন্যে। এই স্কুলটির, তার শিক্ষকের পথ চলাও প্রথাগত স্কুলের থেকে আলাদা। নিরঞ্জন অবশ্য তাঁদের এই স্কুলকে বর্তমানে ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ বলেন।

প্রায় ২৩ বছর আগের কথা। পল্লির বাসিন্দারা জানান, ছেলেমেয়েদের স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ভর্তি করাতে গেলে তখন নানা বাধার সম্মুখীন হতে হত। অথচ, কুষ্ঠ রোগ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা মানুষজনকে পুনর্বাসন দেওয়া হয় এখানে। এই পরিস্থিতিতে, সে সময়ে তৎকালীন আসানসোল পুরসভার সৌজন্যে এক কামরার বাড়িতে গড়ে ওঠে এই স্কুল। যৎসামান্য সাম্মানিকে ওই পল্লিরই বাসিন্দা, যুবক নিরঞ্জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

ধীরে-ধীরে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে সময়ের সঙ্গেই বদল আসে। পল্লির ছেলেমেয়েরাও এই মুহূর্তে এলাকার নানা স্কুলে পড়াশোনা করে। এমনটা জানিয়েই নিরঞ্জনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখন আমাদের স্কুলটিকে একটি কোচিং সেন্টার বলা যেতে পারে। এখানকার অভিভাবকেরা বাড়িতে গৃহ-শিক্ষক রাখতে পারেন না। আমি সে কাজটি করছি।’’ সে দিনের যুবক, বর্তমানে বছর ৪১-এর নিরঞ্জন জানান, এই মুহূর্তে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ২৪ জন পড়ুয়া রয়েছে এখানে। এ পর্যন্ত প্রায় একশো জনকে ছাত্রছাত্রীকে পড়িয়েছেন তিনি। তবে, নিরঞ্জনের স্কুলের সরকারি কোনও অনুমোদন নেই। এই মুহূর্তে এটি ‘কোচিং সেন্টার’। তবে একসময় এখান থেকে পড়াশোনা করেই সরাসরি হাইস্কুলে ভর্তি হতেন পড়ুয়ারা। হাইস্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সেই সময়ে কোনও শংসাপত্র লাগত না বলে, ভর্তি হতে কোনও কোনও সমস্যা হত না বলেই এলাকার শিক্ষকদের সূত্রে জানা গিয়েছে।

আদতে বাঁকুড়ার মামরার বাসিন্দা, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ নিরঞ্জন জানান, ন’বছর বয়সে তাঁর শরীরে দানা বাঁধে কুষ্ঠ রোগ। পরিবারই প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছিল। রোগ ক্রমে বাড়তে থাকে। ১৭ বছর বয়সে নিজেই ভর্তি হন, বাঁকুড়ার গৌরীপুর কুষ্ঠ হাসপাতালে। তখন তিনি বাঁকুড়ারই একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। ওই সময়েই পরিবার থেকে তাঁর আলাদা থাকা শুরু। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে, সুস্থ হয়ে উঠে নিরঞ্জন ‘কুষ্ঠ কল্যাণ সমিতি’র সদস্য হন এবং কুষ্ঠ নিবারণের কর্মসূচিতে যোগ দেন। সে কাজের সূত্রেই ১৯৯৬-এ বার্নপুরের এই পল্লিতে নিরঞ্জনের চলে আসা। নিরঞ্জনের দুই সন্তান। স্ত্রী বকুল বলেন, ‘‘আমার স্বামী যে এই কাজ করছেন, সে জন্য আমি গর্বিত।’’

এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া সাম্মানিক আর পল্লির একটি ছোট দোকানের আয়েই দিন গুজরান হয় নিরঞ্জনের। আজ, রবিবার শিক্ষক দিবস। তাঁদের প্রিয় শিক্ষককে সম্মান জানাতে শুক্রবার সকাল থেকেই ওই এক কামরার স্কুল সাফ করতে দেখা গেল খুদে পড়ুয়াদের। তারা বলে, ‘‘এখন স্কুল বন্ধ। কিন্তু পাড়ার স্কুল খোলা থাকায়, আমাদের ভাল লাগছে। খেলাধুলোও করতে পারি।’’ অভিভাবক কল্পনা কৈবর্ত্য বলেন, ‘‘একটা সময় আমাদের ছেলেমেয়েদের কেউ পড়াতেন না। সে সময়ে নিরঞ্জন এগিয়ে আসেন। এখনও উনি ছেলেমেয়েদের পাশে থাকেন সব সময়।’’ নিরঞ্জনের এই ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের জেলা চেয়ারম্যান আশিস দে-রাও। আশিসবাবু বলেন, ‘‘এখন আর কুষ্ঠপল্লির বাসিন্দা বলে কোনও ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু নিরঞ্জন যা কাজ করছেন, তাতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা উপকৃত হচ্ছে।’’

পাশাপাশি, গোটা বিষয়টি নিয়ে শহরের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কুষ্ঠরোগী অথবা কুষ্ঠপল্লির বাসিন্দা, যে-ই হোক না কেন, কাউকেই দূরে সরিয়ে রাখাটা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। ওই শিক্ষক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’’

leprosy coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy