Advertisement
E-Paper

বহুতলের নীচে দেহ শিক্ষিকার

কী বলছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা? মুখোমুখি ফ্ল্যাটে থাকেন বধূ রমা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ভদ্র, নম্র স্বভাবের ছিলেন সোমাদেবী। সরস্বতী পুজোয় ভাল আবৃত্তি করতেন। সারাদিন স্কুলে থাকতেন। তাই সে ভাবে দেখা-সাক্ষাৎ হত না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২২
সোমাদেবী

সোমাদেবী

দু’দিন আগে তিনি স্কুলে গিয়েছেন। সময় মতো বাড়িও ফিরেছেন। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হল প্রধান শিক্ষিকার। ঘটনাটি দুর্গাপুরের বিধাননগরের। স্বাভাবিক ভাবে সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় (৪৫) নামে ওই শিক্ষিকার মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে।

সোমাদেবী বুদবুদ গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর দেহ আবাসনের নীচে পড়েছিল। তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন, না কি ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন—ধন্দে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধাননগরের গ্রুপ হাউজিংয়ের ওই চারতলা আবাসনে ১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন সোমাদেবী। স্বামী অমীয় সামন্ত দুর্গাপুরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র শিক্ষক। ছেলে অরিত্র দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ ছাদ থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে তাঁরা ছুটে যান। দেখেন সোমাদেবী নীচে পড়ে রয়েছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে বলে ঘোষণা করেন। শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে।

এই জায়গায় পড়েছিল সোমাদেবীর দেহ । —নিজস্ব চিত্র

কী বলছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা? মুখোমুখি ফ্ল্যাটে থাকেন বধূ রমা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ভদ্র, নম্র স্বভাবের ছিলেন সোমাদেবী। সরস্বতী পুজোয় ভাল আবৃত্তি করতেন। সারাদিন স্কুলে থাকতেন। তাই সে ভাবে দেখা-সাক্ষাৎ হত না।’’ পাশের আবাসনে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী অরুণ রায়। তিনি বলেন, ‘‘দোকানে যাওয়ার পথে বিষয়টি জানতে পারি। সোমার স্বামী কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন। তারপরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি।’’

তাঁর এই মৃত্যুর পিছনে কী কারণ রয়েছে? ব্যাঙ্ককর্মী অরুণবাবুর দাবি, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরেই স্কুল সংক্রান্ত বিষয়ে চাপে ছিল সোমা। বুদবুদের কেউ তাঁকে অনুসরণও করত। কখনও তাঁর ছেলেকে অপহরণের হুমকি দেওয়া হত। এ সব কথা সোমা আমাদের বিভিন্ন সময়ে বলেছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, পুলিশের কাছে যেতে। শাসকদলের নেতাদেরকে বিষয়টি জানাতে। কিন্তু তারপরে কী হয়েছে আর কিছু বলেনি। আর বৃহস্পতিবার রাতে এই কাণ্ড ঘটে গেল।’’

সোমাদেবীর স্বামী অমীয়বাবু কোনও কথা বলতে চাননি। তবে স্কুল সংক্রান্ত সমস্যার কথা সোমাদেবী আত্মীয়দেরও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর বাপেরবাড়ি তমলুকে। সেখান থেকে আসা এক আত্মীয় সলিল মাইতির দাবি, ‘‘স্কুলে বিভিন্ন কাগজপত্রে জোর করে সই করিয়ে নেওয়া হত বলে সোমাদেবী তাঁর বাবাকে বার বার জানিয়েছেন।’’ স্কুল সংক্রান্ত সমস্যার কথা তাঁকেও ফোনে বলেছিলেন। কিন্তু বিস্তারিত বলেননি বলে দাবি আর এক আত্মীয় ছবি মাজির।

যদিও স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘স্কুল কমিটির সঙ্গে কখনও প্রধান শিক্ষিকার মতান্তর হয়নি। উনি শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সে কথা উনি আমাকেও একাধিকবার বলেছেন। হাঁটা-চলা করতেও সমস্যা হত।’’ তিনি বলেন, ‘‘তাঁর এমন আকস্মিক আমরা মৃত্যুতে মর্মাহত।’’

সোমাদেবীর পারিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সে জন্য তাঁকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হত। রক্তচাপ ও হাঁটুতে সমস্যা ছিল। সে জন্য তিনি সিঁড়ি ভাঙতে পাড়তেন না। তাঁর সহকর্মী শর্মিষ্ঠা মণ্ডল বলেন, ‘‘ভেল্লোর থেকে চিকিৎসা করিয়ে এসেছিলেন। তারপরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমাদেবী বুধবার শেষ বার স্কুল গিয়েছিলেন। আর ঘটনার সময় ঘরে ছিলেন না তাঁর স্বামী। সন্ধ্যায় মা-ছেলে ছাদে ছিল। প্রাইভেট টিউটর পড়াতে আসায় ঘরে চলে আসে ছেলে অরিত্র। সে নেমে আসার কিছুক্ষণ পরেই কাণ্ড। পুলিশ জানায়, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Murder Katoa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy