Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Rath Yatra

Rath Yatra: রথের পরের দিন সেলিমাবাদে হয় ‘সম্প্রীতি’র রথযাত্রা, যোগ দেন হিন্দু-মুসলিমরা

জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বদলে এই রথযাত্রায় রাধাকৃষ্ণের প্রস্তর মূর্তি এবং অষ্টধাতুর গোপাল মূর্তির পুজো করা হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২১ ২৩:০৭
Share: Save:

তিথি মেনে সোমবার গোটা দেশে রথযাত্রা পালিত হয়েছে। তবে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সেলিমাবাদে রথযাত্রা হল তার পরের দিন মঙ্গলবার। এই ‘ব্যতিক্রমী’ রথযাত্রায় আরও ফারাক রয়েছে। জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বদলে এই রথযাত্রায় রাধাকৃষ্ণের প্রস্তর মূর্তি এবং অষ্টধাতুর গোপাল মূর্তির পুজো করা হয়। কেন এমনটা হয়, তার কারণ অবশ্য স্থানীয়দের কাছে অজানা।

স্থানীয়দের মধ্যে সেলিমাবাদের ‘বালগোপাল জিউ’-এর রথযাত্রা জেলায় সম্প্রীতির উৎসব হিসেবে পরিচিত। হিন্দু, মুসলিম-সহ সব সম্প্রদায়ের মানুষজন শামিল হন এতে। সেলিমাবাদে বয়স্করা জানান, কথিত আছে সম্রাট সেলিম খান বহু কাল আগে আরামবাগ থেকে বর্ধমানের দিকে যাচ্ছিলেন। দামোদরের বাঁধ ধরে যাওয়ার সময়ে পথে এই গ্রামের বালগোপাল জিউয়ের মন্দির লাগোয়া জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে তিনি আশ্রয় নেন। পরে পাকাপাকি ভাবে সেখানেই আস্তানা গড়ে তোলেন তিনি। সেলিম খানের নাম অনুসারে পরে গ্রামটি সেলিমাবাদ নামে পরিচিত হয়। ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ক কাজে যুক্ত এলাকার বাসিন্দা পূরবী ঘোষ বলেন, ‘‘কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের ‘চণ্ডীনমঙ্গল কাব্য’-তেও সেলিমাবাদের নামোল্লেখ রয়েছে। ‘ইতিহাস বলে, শের আফগানকে হত্যা করার পর তাঁর পত্নী মেহেরুন্নিসাকে সেলিমাবাদ গ্রামের দুর্গে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেলিম খান। পরবর্তীকালে এই মেহেরুন্নিসাই নুরজাহান নামে পরিচিত হন। সম্রাট হওয়ার পর সেলিম খানের পরিচিতি হয় সম্রাট জাহাঙ্গির নামে।’’

সুপ্রাচীন এই সেলিমাবাদ গ্রামের মাঝেই রয়েছে বালগোপাল জিউয়ের মন্দির। মন্দির গড়ে ওঠার পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শক্তিপদ সাঁতরা বলেন, ‘‘১৯১৮ সালের পরবর্তী কোনও এক সময়ে সেলিমাবাদ গ্রামে এসে সস্ত্রীক বসবাস শুরু করেন দ্বিজবরদাস বৈরাগ্য। বৈষ্ণবসাধক দ্বিজবরদাসই নিজের বাড়ির সামনে মন্দির গড়ে তাতে রাধাকৃষ্ণ এবং গোপাল ঠাকুরের বিগ্রহের পুজোপাঠ শুরু করেন। রথ উৎসবের পরের দিন সেলিমাবাদ গ্রামের রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন দ্বিজবরদাস। সে প্রথা মেনেই রথের পর দিন রথযাত্রা করে সেলিমাবাদের বালগোপাল জিউ সেবা সমিতি।’’ শক্তিপদ আরও বলেন, “পুরীর রথে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহের পুজোপাঠ হয়। কিন্তু সেলিমাবাদের রথে রাধাকৃষ্ণ এবং গোপালের পুজো হয়। ভক্তদের প্রসাদ ও ভোগ বিতরণ শেষে বিকেলে কাঠের তৈরি প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার রথে রাধাকৃষ্ণ এবং গোপালের বিগ্রহ চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দামোদরের ধারে মাসির বাড়িতে। মাসির বাড়িতে যাওয়ার পথে রথের রশিতে টান দেন সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Communal harmony Rath Yatra Jamalpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE