Advertisement
E-Paper

সামাল দিলেন সিনিয়রেরা

কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক প্রশান্ত কুমার রায়, জোনাকি দাস সরকারের কথায়, “সিনিয়র চিকিৎসকেরা রাত জেগেছেন। আবার সকালে কাজে এসেছেন। বহির্বিভাগও সামলে দিয়েছেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৮
দায়িত্ব: রোগী-পরিষেবায় ব্যস্ত হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক। বর্ধমান মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

দায়িত্ব: রোগী-পরিষেবায় ব্যস্ত হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক। বর্ধমান মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

জুনিয়রেরা যখন কর্মবিরতি পালন করছেন, রোগীদের প্রতি তখন কর্তব্য সারলেন সিনিয়রেরা।

বৃহস্পতিবার রাত জেগে রোগীদের পাশে থাকলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎকেরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বৃহস্পতিবার মৃত রোগীর পরিজনদের হাতে মার খাওয়া চিকিৎসকও। শুক্রবারও বিভিন্ন বিভাগ তো বটেই, বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ সামলে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে হাসপাতাল থেকে উতরে দিলেন সেই অভিজ্ঞেরাই! জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তা সিনিয়র চিকিৎসকদের জন্যই দ্রুত সামাল দেওয়া গিয়েছে বলে মনে নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।

হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা এ দিন বলেন, “সিনিয়রদের স্বতঃস্ফূর্ততার জন্যেই দু-এক বার ছাড়া রোগীর পরিজনদের ক্ষোভের সামনে আমাদের পড়তে হয়নি। শুধু তাই নয়, নথি অনুযায়ী—হাসপাতালে ভর্তি থেকে অস্ত্রোপচার সব কিছুই স্বাভাবিক ছিল। গ্রুপ করে কলেজের অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসক-শিক্ষকেরা হাসপাতালে রোগীদের পাশে ছিলেন।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে বর্ধমান মেডিক্যালের ৫১০ জন জুনিয়র চিকিৎসক কর্মবিরতি শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে মৃত শিশুর পরিজনেরা মন্তেশ্বরের আকবরপুর গ্রাম থেকে গাড়ি করে এসে হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে হামলা চালান। এক সিনিয়র চিকিৎসক-সহ পাঁচ জন প্রহৃত হন। ঘটনার পরেই পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বিকেলের পর থেকেই রোগীদের একাংশ হাসপাতাল ছাড়তে শুরু করেন। চিকিৎসা না-পেয়ে অনেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকেই কলকাতা বা শহরের অন্য বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছিলেন। ততক্ষণে ওই হাসপাতালেই ভর্তি থাকা আরও এক শিশুর মৃত্যুর খবর কর্তৃপক্ষের কাছে চলে এসেছে। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে পারে আশঙ্কা করে তখনই হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ, ডেপুটি সুপার এবং কয়েক জন সিনিয়র চিকিৎসক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ‘স্ট্র্যাটেজি’ ঠিক করেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ১) জরুরিকালীন ভিত্তিতে চিকিৎসক-নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়। ২) সমস্ত বিভাগের প্রধানদের হাসপাতালে হাজির থেকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে বলা হয়। ৩) বর্ধমান শহর বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছেন, এমন চিকিৎসকদের হাসপাতালে তুলে নিয়ে আসা হয় ৪) সমস্ত নার্স ও নার্সিং ট্রেনিং কলেজের ভাল ছাত্রীদের দিয়ে রোগীদের শুশ্রূষা করানোর ব্যবস্থা করা হয় ৫) তুলনামূলক ভাবে জরুরি অস্ত্রোপচারকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ৬) জরুরি বিভাগকে যে কোনও মূল্যে সচল রাখার কথাও বলা হয়।

কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক প্রশান্ত কুমার রায়, জোনাকি দাস সরকারের কথায়, “সিনিয়র চিকিৎসকেরা রাত জেগেছেন। আবার সকালে কাজে এসেছেন। বহির্বিভাগও সামলে দিয়েছেন। এমনকী, রোগীর পরিজনদের হাতে প্রহৃত ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকও রাতে হাসপাতালে ছিলেন।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ২৪ ঘন্টায় ২৩টি অস্ত্রোপচার-সহ ৫৩টি প্রসব হয়েছে। শিশু ও প্রসূতি ভর্তি হয়েছেন যথাক্রমে ৭৯ ও ৭৩। মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৬৮। এ ছাড়াও শল্য ও অস্থিবিভাগে বৃহস্পতিবার রাতেও অস্ত্রোপচার হয়েছে। এক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, “দু-চার দিন পর যে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব, দিন থাকলেও তাঁদের অস্ত্রোপচার করা হয়নি। আমরা রোগীদের বুঝিয়ে বলেছি। তাঁরা আমাদের কথা শুনেছেন। ফলে সমস্যা হয়নি।” হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “সিনিয়রদের সহযোগিতার জন্য আমাদের তো বটেই, রোগীদেরও মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি।”

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বর্ধমান মেডিক্যাল Burdwan Medical College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy