Advertisement
E-Paper

প্রথম দশে জেলার সাত

দু’বছর আগে আরামবাগের মধুপুর থেকে পড়াশোনার জন্যই পুষ্পেন্দুকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন তাঁর বাবা তাপসবাবু ও মা লিপিকাদেবী। শহরের বেড় মোড়ের কালাচাঁদতলায় ভাড়া থাকেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০১:৪১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাধ্যমিককে হারিয়ে দিল উচ্চ মাধ্যমিক। সে বার রাজ্যের প্রথম দশে ছিল জেলার চার জন। এ বার ওই তালিকায় রয়েছে সাত জন।

দু’বছর আগে আইসিএসই পরীক্ষায় ৯৮.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছিল কার্জন গেট লাগোয়া একটি বহুতলের আবাসিক সুক্রিয় চক্রবর্তী। সেন্ট জেভিয়ার্সের ওই ছাত্র তার পরেই ভর্তি হন বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে। ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে ৪৯৪ নম্বর পেয়ে রাজ্যে তৃতীয় হয়েছন তিনি। যদিও জীববিদ্যার নম্বরে খুশি নন ওই ছাত্র। সুক্রিয়র বাবা সুস্মিত চক্রর্তী বর্ধমান সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভের বুদবুদ শাখার ম্যানেজার। মা জয়শ্রীদেবী উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলের সহকারী স্কুল-পরিদর্শক পদে কর্মরত। আদি বাড়ি কল্যাণীতে হলেও কর্মসূত্রে বর্ধমানে থাকেন তাঁরা। জয়শ্রীদেবী জানান, সুক্রিয়র রাজনীতি নিয়ে খুব আগ্রহ। দিনে ১০-১২ ঘন্টা পড়ার মাঝেও বর্ধমানের শিল্পী দেবেশ ঠাকুরের কাছে আবৃত্তি ও নাটকের পাঠ নিতে যেতেন তিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত, মার্গ সঙ্গীত শুনতেও ভালবাসেন তিনি। সুক্রিয় বলেন, ‘‘বাবা-মা চান আমি ডাক্তার হই। কিন্তু আমি চাই, গবেষনা করতে।’’

এই স্কুল থেকেই ৪৯১ পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন পুষ্পেন্দু খাঁ। চিকিৎসক হতে চান তিনি। দু’বছর আগে আরামবাগের মধুপুর থেকে পড়াশোনার জন্যই পুষ্পেন্দুকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন তাঁর বাবা তাপসবাবু ও মা লিপিকাদেবী। শহরের বেড় মোড়ের কালাচাঁদতলায় ভাড়া থাকেন তাঁরা। আরামবাগের দক্ষিণ রসুলপুর স্কুল থেকে ৯৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বচ্ছন্দ পুষ্পেন্দু দিনে ১৫ ঘন্টা পড়তে। ন’জন গৃহশিক্ষক ছিল তাঁর। তবে বিরিয়ানি আর মুরগির মাংস পেলে আর কোনও দিকে তাকান না তিনি। তাপসবাবু বলেন, “পুষ্পেন্দুর পিসেমশাই মনতোষ মণ্ডল মেমারি ১ ব্লকের পশু চিকিৎসক। পুষ্পেন্দুর সাফল্যের কারিগর উনিই।’’

মাধ্যমিকে রাজ্যে দশম পেয়েছিল মেমারি বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল (ইউনিট ১) স্কুলের অর্ধেন্দু মৌলিঘোষ। উচ্চ মাধ্যমিকে ওই স্কুল থেকেই ৪৯০ পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছেন তিনি। মেমারি শহরের দিঘিরপাড়ের কৃতি ছাত্রটি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান। বাবা নবকুমার ঘোষ অঙ্কের শিক্ষক। তাঁর কথায়, “প্রত্যাশা ছিল, তবে বেশি ভাবিনি আমরা। ছেলের ফলের পিছনে শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক।’’ পড়াশোনা ছাড়াও মোবাইলে গেম খেলা আর পোষা টিয়ার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন অর্ধেন্দু।

জেলা থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছেন আউশগ্রামের রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়া দাস ও বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের দেবজ্যোতি পাল। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। শ্রেয়া কলা বিভাগ থেকে ওই নম্বর পেয়েছে। আর দেবজ্যোতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। মাধ্যমিকে ৭৯.৪ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পরে কলা বিভাগে নিয়ে পড়ে সোজা মেধা তালিকায়? শ্রেয়া বলেন, “অন্য কোনও মূলমন্ত্র জানা নেই। পড়ার সময়টা মাধ্যমিকের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’’ বাবা ভগীরথ দাস পেশায় ওষুধ-ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “পড়ার বাইরে কার্টুন দেখা, খবরের কাগজ কেটে নানা রকম জিনিস তৈরি করার নেশা রয়েছে মেয়ের।’’ শ্রেয়া ভবিষ্যতে কলেজ-শিক্ষক হতে চায়।

দেবজ্যোতিরা এখন থাকেন বর্ধমানের ৫ নম্বর ইছালাবাদে। তিনি বলেন, “দিনে ৭-৮ ঘন্টা নিয়মিত পড়তাম। তবে পরীক্ষার ফাঁকে আইপিএলও দেখেছি।’’ বাবা দেবব্রতবাবু ভাতারের বামুনাড়া স্কুলের শিক্ষক। মা চন্দ্রানীদেবী নতুনহাট গার্লস স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা। দেবজ্যোতিও ডাক্তার হতে চায়। পড়ার বইয়ের বাইরে গোয়েন্দা গল্পে ঝোঁক রয়েছে তাঁর। সিনেমা দেখতেও ভালবাসেন তিনি। ধোনি-বিরাটের ভক্ত দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘বাইরে বেরোলে ফাস্টফুডের লোভ সামলাতে পারি না।’’

বর্ধমানের বিদ্যার্থী ভবন গার্লস স্কুলের সুনন্দা মণ্ডল উচ্চ মাধ্যমিকে দশম স্থান পেয়েছে। বাঁকুড়ার কোতলপুরের বাড়ি ছেড়ে পড়াশোনোর জন্যে ২০০৮ সালে বর্ধমানের শাঁখারিপুকুরে চলে আসেন তাঁরা। সুনন্দার দিদি স্বাগতালক্ষ্মী ডেন্টাল কলেজের ছাত্রী। বাবা, পেশায় পশু চিকিৎসক সুভাষবাবু বলেন, “দিনে ৮-১০ ঘন্টা পড়াশুনো করত সুনন্দা। গৃহশিক্ষক ছিলেন দু’জন। একটি কোচিং সেন্টারেও নিয়মিত যেত। অঙ্ক-রসায়ন বাদে বাকি বিষয়গুলি আমিই দেখে দিতাম।’’ সুনন্দা ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যার উপর গবেষনা করতে চায়। ছবি আঁকা, আবৃত্তি-গানেও ঝোঁক রয়েছে তাঁর।

দশম স্থানে রয়েছে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সাগর চন্দ। প্রতিবন্ধী ছাত্র হিসেবে রাজ্যের মধ্যে সম্ভবত প্রথম তিনি। ভবিষ্যতে রসায়ন নিয়ে গবেষনা করতে চান রায়নার গোপালপুরের ওই ছাত্র। সাগরের বাবা তপনবাবু রেলের কর্মী, মা জয়শ্রীদেবী গৃহবধূ। তাঁরা এখন থাকেন শাঁখারীপুকুর এলাকায়। জয়শ্রীদেবী বলেন, “মাধ্যমিকে দু’নম্বরের জন্যে মেধা তালিকায় ছেলে আসতে পারেনি। এ বার সেই আক্ষেপ পূরণ করে দিল।’’ জয়শ্রীদেবী জানান, সাগরের ডান পায়ে সমস্যা রয়েছে। দশ বছর আগে কৃত্রিম পা লাগানো হয় তাঁর। তাঁর দাবি, “ছেলে নিজেকে কখনই প্রতিবন্ধী ভাবে না। যে কোনও পরীক্ষাতে সাধারণ ছাত্র হিসেবেই ফর্ম পূরণ করে। বাসে-ট্রেনেও প্রতিবন্ধীর সুবিধা নিতে চায় না।’’ জানা গিয়েছে, দিনের থেকে রাত জেগেই বেশি পড়তেন সাগর। পড়তে পড়তে ভোর হয়ে যেত। তাঁর পছন্দ খেলাও।

Education Higher Secondary Examination 2019 Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy