Advertisement
E-Paper

বাঁধা ছকের বাইরে বেরিয়ে ‘শিশুমিত্র’ দুই স্কুল

আর সে সবের জন্যই এ বার জেলায় ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পাচ্ছে পূর্বস্থলী ও মঙ্গলকোটের দুই স্কুল। জেলা প্রশাসনের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে সেই খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:৪০
মঙ্গলকোটে পাখিদের জন্য গাছে হাঁড়ি বেঁধেছে স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলকোটে পাখিদের জন্য গাছে হাঁড়ি বেঁধেছে স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

পড়াশোনা হয় গতে বাঁধা ছকের বাইরে বেরিয়ে। শিক্ষকদের সঙ্গে হাতে-হাত লাগিয়ে গাছের পরিচর্যা করে পড়ুয়ারা। স্মার্ট ক্লাসরুম থেকে পাখির বাসার জন্য গাছে হাঁড়ি বাঁধা— রয়েছে নানাবিধ ব্যবস্থা। আর সে সবের জন্যই এ বার জেলায় ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পাচ্ছে পূর্বস্থলী ও মঙ্গলকোটের দুই স্কুল। জেলা প্রশাসনের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে সেই খবর।

পূর্বস্থলী অন্নদাপ্রসাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২১২ জন। আছেন চার শিক্ষক-শিক্ষিকা। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৫ থেকে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়ছে। স্কুলে কালমেঘ, ঘৃতকুমারী, হারজোড়া, পাথরকুচি, তুলসী, আমলকির মতো নানা গাছ দিয়ে তৈরি হয়েছে ভেষজ উদ্যান। অন্য একটি অংশে রয়েছে রকমারি ফুলের গাছ। গোটা স্কুল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র শিক্ষা-উপকরণ। দোতলা এই স্কুল ভবনের লনে রয়েছে নানা পুরাকীর্তির ছবি। ঝাঁ চকচকে ক্লাসঘরে রয়েছে সাউন্ডবক্স। গান, ছড়া, কবিতা, গল্পে পড়াশোনা হয়। এ ছাড়া রয়েছে বিজ্ঞান শেখার নানা যন্ত্র, সাংস্কৃতিক চর্চার ভবন, শিশু সংসদের ভবন। মিড-ডে মিলের জন্য রয়েছে তকতকে ভবন। খাওয়ার পরে যে জলে ছাত্রছাত্রীরা হাত ধোয়, তা একটি পাত্রে ধরে ব্যবহার করা হয় বাগানে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, সমস্ত জিনিসই নিজেদের হাতে তৈরি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সে জন্য নির্ধারিত সময়ের বাইরেও তাঁরা আলাদা করে পরিশ্রম করেন। সরকারি অনুদানের বাইরেও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা মায়ারানি ভট্টাচার্য, রথীন সরকার, দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় ও অর্ঘ্য চক্রবর্তী প্রতি মাসে নিজেরা টাকা দিয়ে একটি তহবিল গড়েছেন। স্কুলটি ২০১৫ সালে জেলার নির্মল স্কুলের পুরস্কারও পেয়েছিল। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মায়ারানি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুল ছেড়ে আমাদের স্কুলে ভর্তি হচ্ছে অনেক পড়ুয়া। পঞ্চায়েত, প্রাক্তনী-সহ এলাকার অনেকে সাহায্য করেছেন।’’

পঠনপাঠনের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা ও পড়ুয়াদের খেলাধুলো, সংস্কৃতি চর্চায় নজর দিয়ে ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পাচ্ছে মঙ্গলকোটের মাঝিগ্রাম বিশ্বেশ্বরী হাইস্কুলও। শুক্রবার কলকাতার মহাজাতি সদনে এই পুরস্কার নিতে যাওয়া হবে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। শ্রেণিকক্ষ, শৌচাগার থেকে খেলার মাঠ— সব পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বছর তিনেক আগেই নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কায় পায় স্কুলটি। ১২ বিঘা জমিতে স্কুলের মাঠে রয়েছে নানা ভেষজ গাছ। পড়ুয়াদের খাওয়ানোর জন্য লাগানো হয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, মুসুম্বি, কামরাঙা, জামরুলের মতো নানা ফলের গাছও। প্রতি গাছে ৩০টি করে হাঁড়ি বেঁধে রাখা হয়েছে, যাতে নানা মরসুমে পাখিরা এসে বাসা বাঁধতে পারে। স্কুলে রয়েছে মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, সাংস্কৃতিক মঞ্চ, ১০টি ল্যাবরেটরি, বিজ্ঞানচর্চার জন্য স্মার্ট ক্লাসরুম। তৈরি করা হয়েছে মাল্টিজিম।

প্রধান শিক্ষক সুব্রতকুমার সাহা বলেন, ‘‘ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা কমন রুম আছে। কেউ অসুস্থ হলে সিক রুমও রয়েছে। বিপর্যয় ঠেকাতে প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা করেছি।’’ পড়ুয়া দুর্বা পাঁজা, সামিরুদ্দিন শেখরা বলে, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতায় নজর দেন শিক্ষকেরা।’’

জেলার সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘‘অন্য স্কুলের মতোই বরাদ্দ পায় এই স্কুল। কিন্তু সেখানকার শিক্ষকেরা স্কুল নিয়ে এতটাই উদ্যমী, যে তার পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁরা।’’

শিশুমিত্র School Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy