Advertisement
E-Paper

মাটি মিশছে কয়লায়, ক্ষতি রুখতে নজর

কয়লার ক্রেতারা কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ করছেন, পাথর ও মাটি মেশানো কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও স্টিলপ্ল্যান্টের যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে। ফলে অনেক সময়েই সেই কয়লা ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে বলে ইসিএল জানায়।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৪
ডিপোতে ডাঁই কয়লা। ছবি: পাপন চৌধুরী

ডিপোতে ডাঁই কয়লা। ছবি: পাপন চৌধুরী

দেশের সেরা মানের কয়লা মেলে এই এলাকাতেই, দাবি খনি বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু সেই এলাকা থেকে সরবরাহ করা কয়লারই গুণমান নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে ইসিএল জানায়, ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে সংস্থার ক্ষতি হয়েছে কয়েকশো কোটি। কয়লা সরবরাহের ক্ষেত্রে গুণমানে যাতে কোনও রকম খামতি না থাকে, সে বিষয়ে ধারাবাহিক নজরদারি চালানোর কথা জানিয়েছেন ইসিএল কর্তারা।

ইসিএল সূত্রে জানা যায়, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে উত্তোলন করা বেশির ভাগ কয়লা গুণমানে অত্যন্ত ভাল। ‘কোল কন্ট্রোলার অর্গানাইজেশন’-এর (সিসিও) ঠিক করা মান অনুসারে এই কয়লার বেশির ভাগটাই, ‘জি৪’ বা ‘জি৫’ গ্রেডের। এই গ্রেডের অর্থ কী? কয়লার ‘তাপনমূল্য’ ও তার নিরিখে গুণমান বিচার করে কয়লার গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। তাপনমূল্য বলতে বোঝায়, প্রতি কিলোগ্রাম কয়লা পোড়়ালে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়। জি৪ ও জি৫ গ্রেডের ক্ষেত্রে এই মান যথাক্রমে ৬১০০ থেকে ৬৪০০ কিলোক্যালোরি এবং ৫৮০০ থেকে ৬১০০ কিলোক্যালোরি।

এই কয়লা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইস্পাতশিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই কয়লার ক্রেতারা কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ করছেন, পাথর ও মাটি মেশানো কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও স্টিলপ্ল্যান্টের যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে। ফলে অনেক সময়েই সেই কয়লা ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে বলে ইসিএল জানায়। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সংস্থার সুনামও নষ্ট হচ্ছে বলে জানান ইসিএল কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে সংস্থার প্রায় আড়়াইশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়।

কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে? কর্তৃপক্ষের দাবি, যে ট্রাক ও মালগাড়িতে কয়লা পরিবহণ করা হচ্ছে, সেখানে আগে থেকেই মাটি ও পাথর থাকছে। কয়লা বোঝাইয়ের আগে তা সাফ করা হচ্ছে না। ফলে মাটি, পাথর মিশছে কয়লা।

সমস্যার সমাধানে সংস্থার বিভিন্ন খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার গুণমান পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ইসিএল কর্তৃপক্ষ। এই দলটি বিভিন্ন খনির কোল ডিপো, রেলসাইডিংয়ে আচমকা হানা দিয়ে কয়লার গুণমান পরীক্ষা করবে। অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘কয়লা মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ইসিএলের কয়লার গুণমান প্রশংসিত হয়েছে। তবুও আমরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি।’’

তবে বিপত্তির কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের দেওয়া যুক্তি মানতে নারাজ সংস্থারই কর্তা ও শ্রমিকদের একাংশ। তাঁরা জানান, খনি থেকে কয়লা তুলে পরিবহণের আগে ডিপোতে মজুত করা হয়। দেখা গিয়েছে, মজুত কয়লার কিছু অংশ প্রায়ই চুরি হয়ে যায়। ফলে হিসেব মেলাতে খনি ও ডিপোগুলির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা বাকি কয়লার সঙ্গে মাটি, পাথর মিশিয়ে অবস্থা সামাল দেন। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে খনিগুলির আধিকারিকেরা ডিপোতে মজুত কয়লার সঙ্গে মাটি-পাথর মেশান। যদিও এই অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইসিএল কর্তৃপক্ষ।

ECL Coal Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy