Advertisement
E-Paper

তাঁতিদের সুবিধায় চালু ‘তাঁতশ্রী’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমান জেলার তাঁতশিল্পীর সংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। তাঁদের বেশিরভাগই রয়েছেন কালনা ও কাটোয়া মহকুমায়। এলাকার তাঁতিদের তৈরি পণ্য বিপণনের জন্য এলাকায় সরকারি হাটের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
তাঁতিদের জন্য তৈরি হয়েছে এই ভবন। নিজস্ব চিত্র

তাঁতিদের জন্য তৈরি হয়েছে এই ভবন। নিজস্ব চিত্র

এক ছাদের তলায় নানা সুবিধা দিতে দু’টি তাঁতের হাট চালু হল কালনা মহকুমায়। রবিবার পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর ও কালনার ধাত্রীগ্রামে ‘তাঁতশ্রী’ নামে দু’টি ভবনের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমান জেলার তাঁতশিল্পীর সংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। তাঁদের বেশিরভাগই রয়েছেন কালনা ও কাটোয়া মহকুমায়। এলাকার তাঁতিদের তৈরি পণ্য বিপণনের জন্য এলাকায় সরকারি হাটের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সেই সঙ্গে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী যাতে তাঁতিরা ঠিক দামে পান, সে জন্য একটি কেন্দ্র তৈরি করারও দাবি ছিল। বছর দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় একটি প্রশাসনিক বৈঠকে ‘তাঁতশ্রী’র কথা ঘোষণা করেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ঠিক হয়, প্রকল্পটি হবে সমুদ্রগড় রেলবাজারে। তবে সেখানে জমি পেতে সমস্যা হয়। এর পরেই প্রকল্পের জন্য শ্রীরামপুরে তন্তুজের গুদামের সামনে পড়ে থাকা জমি বাছা হয়। এই প্রকল্পের জন্য ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগসমূহ এবং বস্ত্র দফতর প্রায় ৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। তুলনায় ছোট, তবে একই ধরনের একটি পরিকল্পনার জন্য প্রায় ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে এই দফতর। প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্ব বর্তায় তন্তুজের উপরে। ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর দু’টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।

এ দিন শ্রীরামপুরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তাঁতশ্রী ভবনের মধ্যে রয়েছে ২১টি স্থায়ী স্টল। সেগুলি বণ্টন করা হবে হস্ত তাঁতশিল্পীদের নিয়ে গড়া সমবায় এবং ক্লাস্টার গোষ্ঠীকে। ছোট তাঁতি যাঁরা নিজেদের বাড়িতে শাড়ি বুনে বাজারে বিক্রি করেন, তাঁদের জন্য তৈরি হয়েছে ৬৫টি খোলা স্টল। তাঁরা এ বার ওই স্টলে পণ্য বিক্রি করবেন। তাঁতের শাড়ি বোনার জন্য প্রয়োজন হয় উন্নত সুতো ও রঙের। সে জন্য তৈরি করা হয়েছে বিক্রয় কেন্দ্র। তৈরি করা হয়েছে ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার’। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে আদানপ্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে তাঁতহাটের মধ্যেই। এ ছাড়াও তৈরি হয়েছে উন্নত ‘ডিজাইন স্টুডিও’। সেখান থেকে তাঁতিরা ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নকশা পাবেন। তাঁতিদের তৈরি জিনিস প্রদর্শনীর জন্য ব্যবস্থা থাকছে। তাঁতের হাটের মধ্যেই মিলবে ব্যাঙ্ক, হ্যান্ডলুম অফিসের মতো নানা সুবিধা। এ দিন অনুষ্ঠানে তন্তুজের এমডি রবীন্দ্রনাথ রায় জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতে সরকারি উদ্যোগে এক ছাদের তলায় এত কিছুর ব্যবস্থা এই প্রথম। শ্রীরামপুরের এই হাট থেকে উপকৃত হবেন প্রায় ২৯ হাজার তাঁতশিল্পী।

এ দিন অনুষ্ঠানে এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপনবাবু দাবি করেন, বাম আমলে তাঁতশিল্পের রুগ্‌ণ দশা ছিল। তাঁতের হাট চালুর ফলে এলাকার তাঁতিদের পণ্য বিক্রির জন্য কলকাতার বাজারে যাতায়াত করতে হবে না। মন্ত্রীর আরও দাবি, বর্ধমানে ৭৪ হাজার তাঁতির মধ্যে ৭০ হাজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পরিচয়পত্র। তাঁতিদের আয় বাড়াতে সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় সাড়ে ৭ লক্ষ শাড়ি, সাড়ে ৪ লক্ষ লুঙ্গি ও ২ লক্ষ চাদর কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়াও বিনামূল্যে নানা তাঁত-সরঞ্জাম বিলি, তাঁতঘর তৈরির জন্য কালনা, কাটোয়া মহকুমা জুড়ে ২৯ কোটি টাকা বিলি, বিভিন্ন তাঁত ক্লাস্টারকে অর্থ সাহায্য, তাঁত অধ্যুষিত এলাকায় ঢালাইয়ের রাস্তা তৈরি-সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ সবের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্নীতি করলে রেহাই নেই। মুর্শিদাবাদের কিছু রেশম শিল্পী সরকারের কাছে সুতো নিয়ে কাপড় না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার কথা বলা হয়েছে।’’ অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল।

Government Schemes Weaver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy