‘সিট বেল্ট পরুন’, পথেঘাটে বেরিয়ে এমন আর্জি পুলিশ বা নানা সংগঠনের সদস্যদের কাছে অনেক বারই শুনেছিলেন ওই চালকেরা। কিন্তু বুধবার, দিনটা অন্যরকম ছিল। শিশুদিবসে ওই চালকদের সামনে এমন আর্জি জানিয়েছে অর্ক রায়, সত্যম দাশগুপ্ত, মেঘা লাহারা। ওরা প্রত্যেকেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। অর্কদের কাছে এমন আর্জি শুনে চালকদের ‘হুঁশ’ ফিরল, অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা।
এ দিন দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের একটি পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল মেঘারা। হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহী দেখলেই ওই শিশুদের আর্জি, ‘হেলমেট পরুন’। অনেককে হেলমেট মাথায় পরিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে। ঠিক সময়ে ঠিক ‘ইন্ডিকেটর’ ব্যবহারের জন্যও তারা আর্জি জানায়। দেওয়া হয় চকোলেটও।
পথ-সচেতনতায় এই শিশুরা সামনে এগিয়ে এসেছিল দয়ানন্দ রোডের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন প্রশিক্ষকেরাও। এই শিশুদের আর্জিতে হুঁশ ফিরেছে অনেক চালকেরই। যেমন, বি-জোনের স্নেহময় আচার্য। তিনি বলেন, ‘‘যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম আজ, তা মনে থাকবে। হেলমেট ছাড়া আর কখনও বাইরে যাব না।’’ সিট বেল্ট না বেঁধেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন বিজয় ওঝা। তিনি বলেন, ‘‘ওই মুখগুলো কোনও দিন ভুলব না।’’
কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? সংস্থার সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্য জানান, এমন শিশুদের সমাজে মিশতে সমস্যা হয়। অনেক সময়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন বা পড়শিদের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয় ওই শিশুদের। তাই তাদের সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য এমন পদক্ষেপ খুব জরুরি। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘এমন পদক্ষেপে, ওই শিশুদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বাড়ে।’’
জানা গিয়েছে, ওই সংস্থাটি সেরিব্রাল পলসি, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, অটিজম, অতি চঞ্চলতা ও অমনোযোগী শিশু, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের বিশেষ প্রশিক্ষণের সাহায্যে শিক্ষাদান, সার্বিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ করে। মূলত ৪-১৩ বছর বয়সী শিশুদের এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত রাখা হয়। এ ছাড়া ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য রয়েছে প্রি-ভোকেশন্যাল ট্রেনিং, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণকেন্দ্র, অ্যাডাল্ট লার্নিং অ্যান্ড লিজর সেন্টার, সেল্ফ অ্যাডভোকেসি গ্রুপ।