ফি বছর সরকারি উদ্যোগে এক দিনের জন্য বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালন করা হয়। তবে এ বার চার দিন ধরে ওই অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ, বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে রাজ্যস্তরের অনু্ষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালনার আটঘোরিয়ায় জেলাস্তরের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। সেখানে থাকবেন জেলাশাসক আয়েষা রানি এ, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার-সহ একাধিক বিধায়ক, জনজাতি সংগঠনের নেতারা। বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। প্রশ্ন উঠছে, জনজাতি সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ককে নিশানা করেই কি এক দিনের উৎসব চার দিন ধরে করা হচ্ছে।
কালনার আটঘোরিয়া ফুটবল ময়দানে জেলাস্তরের অনুষ্ঠান ছাড়া, ব্লকস্তরের অনুষ্ঠান হচ্ছে মেমারি ১ ব্লকে। চার দিনের অনুষ্ঠানে রয়েছে নানা কর্মসূচিও। কালনায় জনজাতিদের মধ্যে ধামসা-মাদল, তির-ধনুক, ক্রীড়া সরঞ্জাম বিলি করা হবে। মেধাবি পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রতিদিনই ফুটবল, তিরন্দাজ-সহ নানাক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাল্যবিবাহের কুফল, ডাইনিপ্রথার মতো কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা, পড়াশোনার পরে কোন কোন পেশায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তা নিয়েও চলবে আলোচনা। স্বনির্ভর গোষ্ঠী-সহ বিভিন্ন দফতরের স্টলও থাকবে উৎসবে।
গত কয়েক বছর ধরে আদিবাসী দিবস পালিত হচ্ছে ৯ অগস্ট। এ বার উৎসব চার দিন কেন, উত্তর নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলার কর্তাদের দাবি, নবান্নের নির্দেশ মতো কাজ হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানে সাড়ে সাত শতাংশ জনজাতি মানুষ বাস করেন। মেমারি ১ ও ২, জামালপুর, আউশগ্রাম ১ ও ২, কালনা ১ ও ২, বর্ধমান ২ ও ভাতার ব্লকে জনজাতিদের প্রভাব রয়েছে। শতাংশের বিচারে মেমারি ২ ব্লকে (১৯%) জনজাতি বেশি রয়েছেন। আর লোকসংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে জামালপুর (৪২ হাজার)। রাজনৈতিক মহলের দাবি, পূর্ব বর্ধমানে জনজাতি ভোটের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। সিপিএমেরও প্রভাব রয়েছে। সেই কারণেই ভোট টানতে তৎপর তৃণমূল। জেলার ১১টি বিধানসভায় ৭১টি বুথ জনজাতি অধ্যুষিত। গত লোকসভা নির্বাচনে ৭১টি বুথে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৪১.৭৯%। আর বিজেপি ভোট পেয়েছে ৩৯.৫৬%। সিপিএমের ঘরে ঢুকেছিল ১৬.৫৭% ভোট। জামালপুরের তিনটে বুথে, ভাতার ও কাটোয়ার একটি বুথে তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি এগিয়ে ছিল।
সিপিএমের আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সম্পাদক সুকলাল মান্ডি বলেন, “একদিকে জনজাতিদের অধিকারে বঞ্চনা করা হচ্ছে। আর ভোটের কথা মাথায় রেখে উৎসবে মজিয়ে রাখছে তৃণমূল।” বিজেপির জনজাতি সম্প্রদায়ের নেতা ক্ষুদিরাম টুডুও বলেন, “আমাদের জন্য কেন্দ্র সরকার নানা সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তা থেকে বঞ্চিত করছে। উৎসব করে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।” যদিও তৃণমূলের আদিবাসী সংগঠনের রাজ্য সভাপতি দেবু টুডুর দাবি, “আমাদের দাবি মেনেই চার দিনের উৎসব হচ্ছে। যাঁদের সঙ্গে আদিবাসীরা নেই, তাঁরাই এই উৎসবের বিরোধীতা করবে। আদিবাসীরা জানেন, তাঁদের প্রকৃত বন্ধু হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)