Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভয় কাটছে, তবে স্কুল প্রায় ফাঁকা

তিন দিনের দমচাপা পরিস্থিতি অনেকটাই হালকা। দোকানপাট খোলা, রাস্তাঘাটে লোকজনও রয়েছেন মোটামুটি। এককথায়, পুলিশ-জনতা ধুন্ধুমারের আউশগ্রাম অনেকটাই শান্ত সোমবার।

আউশগ্রাম হাইস্কুল চত্বরে খেলায় ব্যস্ত পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

আউশগ্রাম হাইস্কুল চত্বরে খেলায় ব্যস্ত পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

তিন দিনের দমচাপা পরিস্থিতি অনেকটাই হালকা। দোকানপাট খোলা, রাস্তাঘাটে লোকজনও রয়েছেন মোটামুটি। এককথায়, পুলিশ-জনতা ধুন্ধুমারের আউশগ্রাম অনেকটাই শান্ত সোমবার।

এমনকী, যে স্কুলের জায়গা দখল নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত সেই স্কুলও খুলেছিল এ দিন। যদিও পড়ুয়াদের তেমন দেখা যায়নি, শিক্ষকেরাও স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেকটাই কম এসেছেন। আউশগ্রাম হাইস্কুলের টিচার-ইন-চার্জ সন্ন্যাসী রুইদাসের দাবি, ‘‘সবার মধ্যে থেকে ভয়টা যায়নি। তা ছা়ড়া সামনে সরস্বতী পুজো। তাই শিক্ষক-পড়ুয়াদের সংখ্যা আরও কম।’’ তিনি জানান স্থানীয় বিধায়ক ও বিডিও স্কুলে এসেছিলেন। পুলিশের তরফ থেকেও সাহস জোগানো হয়েছে।

স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ৬০ জন পড়ুয়া এসেছে। শিক্ষক রয়েছেন সাত জন। ওই শিক্ষকদের গুসকরা থেকে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন আউশগ্রাম ১ এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু ও স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থানদার। অভিভাবক বিশ্বজিৎ দাস, সনাতন হাঁসদাদের দাবি, ‘‘কিছুটা আতঙ্ক রয়েইছে। রাজনৈতিক দলের নেতারাও এলাকায় আসাযাওয়া করছেন। পরিস্থিতি একটু না শোধরালে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাব কী করে!’’ শিক্ষকেরা জানান, সরস্বতী পুজোর দিনই বোঝা যাবে আতঙ্ক কেটেছে কি না।

এ দিন আউশগ্রাম বাজারে হ্যান্ড মাইক নিয়ে ও গাড়িতে মাইক বেঁধে দোকানপাট খোলার জন্য ও গ্রামে ফিরে আসার জন্য প্রচার চালায় পুলিশ। বলা হয়, ‘কোনও নির্দোষকে ধরা বা আটক করা হবে না। নিশ্চিন্তে দোকান খুলতে পারেন।’ কার্যত বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে রাস্তাঘাটে বেরনো, দোকান খোলার কথাও বলা হয়। আর্জিতে কাজও দেয়। ঘরছাড়ারা গ্রামে না ফিরলেও আউশগ্রাম বাজারের শতাধিক দোকানের পঞ্চাশ শতাংশ খোলে এ দিন। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুলিশ পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তবে কেনাবেচা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তাঁদের দাবি, তিন থেকে চারশো লোক বাজারে এসেছিলেন এ দিন। মুদি ব্যবসায়ী শিবরাম সাহা, হোটেল ব্যবসায়ী প্রশান্ত হালদার বলেন, ‘‘ভয়ে দু’দিন দোকান খুলিনি। পুলিশের আশ্বাস পেয়ে দোকান খুলেছি।’’ ব্যবসায়ী অনিল গোপ, সব্জি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাদশা মালিকদের কথায়, ‘‘কার্যত তিন দিন পরে দোকান খুলেছি। কিছুটা ব্যবসা হয়েছে।’’

আউশগ্রাম হাইস্কুলের উল্টো দিকেই হাট। সেই মাঠেই আজ, মঙ্গলবার দুপুরে সভা করার কথা আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের। দেখা গেল, মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে। পুরো এলাকা তৃণমূলের পতাকায় মোড়া। হাটের পিছনেই আউশগ্রাম থানা। তার সামনে ঢিলেঢালা মেজাজে দাঁড়িয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, বর্ধমান সদরের এসডিপিও সৌমিক সেনগুপ্ত ও অন্য কর্তারা। গিয়ে দেখা যায় পথচলতি দু’আড়াই বছরের একটি শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করছেন দ্যুতিমানবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্কুল, দোকানপাট খুলে গিয়েছে। ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ এ দিন পুলিশের মোটরবাইক বাহিনি বিভিন্ন গ্রামে টহল দেয়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গুসকরায় সভা করে আউশগ্রামে বাসস্টপ মোড়ে আসেন। সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে তিনি স্কুল বা থানার দিকে না গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফিরে যান। সিপিএমের আউশগ্রামের জোনাল কমিটির সম্পাদক, ধৃত সুরেন হেমব্রমকে আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ausgram Panic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE