E-Paper

মাদকের অন্ধকার থেকে আলোর যাত্রী মণীশ

মণীশ বুঝতে চান নেশার সঙ্গে অপরাধ-প্রবণতার সম্পর্কটিও। তাঁর কথায়, “স্রেফ আনন্দ পেতে কেউ হয়তো প্রথমে নেশা করলেন। সেটাই হয়ে অভ্যাস ও আসক্তি দাঁড়ায়।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১২
মণীশ মহেশকর।

মণীশ মহেশকর। —নিজস্ব চিত্র।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি মাধ্যমিক পাশ করার পরে, মাদকের নেশায় ডুব দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে নেশামুক্তি কেন্দ্রে। তিনি আসানসোলের মণীশ মহেশকর। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে এই মণীশই এখন আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারের যে সব আবাসিকেরা মাদকাসক্ত, তাঁদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে চলছে এই নেশা থেকে মুক্ত হওয়ার যুদ্ধ। অন্যকে স্বাভাবিক জীবনের ফেরানোর এই কাজটা মণীশ করছেন গত প্রায় এক যুগ ধরে।

সম্প্রতি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ মাদকাসক্ত বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের নেশামুক্তির জন্য চিন্তাভাবনা করেন। জেলের সুপার কৃপাময় নন্দী জানান, তাঁরা মণীশের কাজকর্মের কথা জানতেন। আর তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে, এ জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেন না মণীশ।

কী ভাবে চলছে নেশামুক্তির কর্মকাণ্ড? সংশোধনাগার সূত্রে জানা গেল, সকাল ৯টার আগেই চলে আসেন মণীশ। প্রাতরাশের পরে শুরু মণীশের ক্লাস। টানা দু’ঘণ্টা ধরে যোগাভ্যাস, মনীষীদের বাণী ও জীবন পাঠ, কারা কী ভাবে মাদকাসক্ত হলেন, তা নিয়ে কথাবার্তা— এ ভাবেই চলে লড়াইটা। মণীশ জানান, এই মুহূর্তে সংশোধনাগারের ৪০ জন আবাসিক নিয়মিত আসছেন তাঁর পাঠশালায়। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, নেশার প্রতি আসক্তি বিষয়টি আসলে কী। কী করে এই অভ্যাস, রোগ এমনকি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, হয় সে কথাও। সে সঙ্গে, কী ভাবে এ থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করবেন এক জন, তা নিয়েও হয় আলোচনা। কৃপাময় বলেন, “এই প্রক্রিয়ার ফলে, যদি কয়েক জনও সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারেন, তা হলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল।”

মণীশ বুঝতে চান নেশার সঙ্গে অপরাধ-প্রবণতার সম্পর্কটিও। তাঁর কথায়, “স্রেফ আনন্দ পেতে কেউ হয়তো প্রথমে নেশা করলেন। সেটাই হয়ে অভ্যাস ও আসক্তি দাঁড়ায়। শারীরিক সমস্যার কথা বুঝে অনেকে নেশার কবল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেন না। এক সময়, হাল ছেড়ে দিয়ে নেশার সামগ্রী জোগাড় করতে গিয়ে অপরাধের আশ্রয় নেন।” তবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বলে
আশা তাঁর।

এ প্রসঙ্গে, টানছেন নিজের উদাহরণও। পেশায় বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবসায়ী মণীশ জানান, আসানসোলের বেসরকারি একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে তাঁর পড়াশোনা। সেখান থেকেই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তার পরেই, মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। বাড়ির সদস্যেরা তাঁকে বিহারের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা করান। ২০০৫-এ মণীশ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। এর পরে চেন্নাইয়ের একটি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং পরে কলেজ থেকে বিবিএ পাশ করেন। ২০১২-য় আসানসোলে ফেরেন।

আসানসোলে ফিরেই শুরু হয় নতুন জীবন। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন পরিচালিত নেশামুক্তি কেন্দ্রে গিয়ে অন্যদের নিয়মিত মাদকের আসক্তি কাটানোর কাজ করছেন। মণীশের মা মিনা এবং স্ত্রী শিবাঙ্গী বলেন, “নিজেকে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে মণীশ। এখন অন্যদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাচ্ছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।” মণীশের দাবি, এখনও পর্যন্ত কয়েকশো যুবক তাঁর হাত ধরে সুস্থ হতে পেরেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Asansol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy