Advertisement
০৫ মে ২০২৪
সাংসদের দলবদল, গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব
Sunil Mandal

ভোটে হারানোর চেষ্টা হয়েছিল, দাবি সুনীলের

অভিযোগ করেন, ভোটে জেতার পরে দলের সভায় ডাকা হত না। উৎসাহী হয়ে দলের সভায় গেলে, ‘অপমান’ করা হত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৭
Share: Save:

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে, জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। মূলত ক্ষোভ জানালেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ ও জেলার এক প্রবীণ বিধায়কের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে দুই বর্ধমান মিলিয়ে তৃণমূলের আর কোনও সাংসদ রইল না। তবে সুনীলবাবুর বিজেপিতে যোগদানে তাঁরা উদ্বিগ্ন নন বলে দাবি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

সুনীলবাবুর দলবদল এই প্রথম নয়। ২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের হাওয়ার’ মধ্যেও গলসিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে তৃণমূল প্রার্থীকে প্রায় ১১ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূলে যোগ দেন। সে মাসেই বিধায়ক পদ ত্যাগ করেন। সে বছর লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জিতে প্রথম বার সাংসদ হন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বর্ধমান-দুর্গাপুর ও আসানসোল কেন্দ্র বিজেপি দখল করলেও, বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। শনিবার দুপুরে তিনি বিজেপিতে যোগ দিতেই অবিভক্ত বর্ধমানে তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা দাঁড়াল শূন্য।

এ দিন মেদিনীপুর থেকে ফোনে সাংসদ দাবি করেন, ‘‘এত দিন একটা দলে ছিলাম। তাই কোনও মন্তব্য করিনি। বুকের ব্যথা লুকিয়ে রেখেছিলাম। এখন আমার কথা জানাতে তো কোনও অসুবিধা নেই।’’ কী ‘ব্যথা’ লুকিয়ে রেখেছিলেন? সাংসদের অভিযোগ, ‘‘জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও এক বিধায়ক আমাকে হারিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ওই বিধায়ক আমাকে বিধানসভায় কাজ পর্যন্ত করতে দিচ্ছিলেন না। শেষ মুহূর্তে রণকৌশল বদলাতে হয়। তাঁদের বাদ দিয়ে ভোট করতে হয়েছে। তা না হলে আমারও দশা জেলার অন্য এক প্রাক্তন সাংসদের মতো হত।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভোটে জেতার পরে দলের সভায় ডাকা হত না। উৎসাহী হয়ে দলের সভায় গেলে, ‘অপমান’ করা হত। এমনকি, প্রশাসনের আধিকারিকদের দিয়েও অপমান করানো হয়েছে। সুনীলবাবুর কথায়, ‘‘বিডিও-কে দিয়ে ফোন করিয়ে পূর্বস্থলীতে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে আমাকে যেতে নিষেধ করা হয়। এটা এক জন সাংসদের পক্ষে খুবই অপমানজনক।’’

সাংসদ জানান, রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ তিন জন খুন হয়েছেন। তাঁদের পরিজনেরা বিচারের আশায় ছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘খুন হওয়া নেতারা আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। উন্নয়নের জন্য আমার কাছে আসতেন। তাই তাঁদের মরতে হল। বিচার তো দূর, অভিযুক্তেরাই দলের ‘সম্পদ’ হয়েছে গিয়েছে! কয়েকদিন আগে এক অভিযুক্তকে রীতিমতো সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আমারও একই অবস্থা করার চক্রান্ত চলছে বলে দলের একাংশ আমাকে জানায়।’’ তাঁর দাবি, “এ সব কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল। তার পরেও দেখলাম, পুরনোদের ছেঁটে ফেলা হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ঘনিষ্ঠকেও বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্ত মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ডাকলেন কই?’’

সাংসদের ক্ষোভকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জেলা তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী টিকিট দিয়েছেন, আমরা খেটেছি, তবেই তিনি দু’বার দলের সাংসদ হয়েছেন। এখন অনেক যুক্তি খাড়া করছেন। যা খুশি বলুন। ওঁকে গুরুত্ব দিতে চাইছি না।’’ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সবাই স্বাগত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sunil Mandal TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE