Advertisement
E-Paper

মায়ের ‘টোটকা’, পুড়ে গেল মেয়ে

ঘটনার পরে ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন ওই কিশোরী নবনীতার মা, কেতুগ্রামের উদ্ধারনপুরের বাসিন্দা স্বপ্না মজুমদার। তাঁর দাবি, ‘‘ওঝার কথা শুনে আগুন জ্বালিয়েছিলাম। ওভাবে ছড়িয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। মেয়েটার ভাল করতে গিয়ে বিপদ বাড়িয়ে ফেলেছি।’’   

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৬
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছিল বছর সতেরোর কিশোরী। সোমবার তাকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তিও করানো হয়। মেয়েকে সুস্থ করতে ‘ওঝার টোটকা’ শুনে হাসপাতালেই মেয়ের নাকের সামনে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিতে যান মা। কুসংস্কারের মাসুল দিতে হয় মেয়েটিকে। অক্সিজেন মাস্কে আগুন লেগে পুড়ে যায় তার মুখের একাংশ। তবে হাসপাতালের কর্মীদের তৎপরতায় আগুন ছড়িয়ে পড়েনি।

ঘটনার পরে ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন ওই কিশোরী নবনীতার মা, কেতুগ্রামের উদ্ধারনপুরের বাসিন্দা স্বপ্না মজুমদার। তাঁর দাবি, ‘‘ওঝার কথা শুনে আগুন জ্বালিয়েছিলাম। ওভাবে ছড়িয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। মেয়েটার ভাল করতে গিয়ে বিপদ বাড়িয়ে ফেলেছি।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নবনীতা গঙ্গাটিকুরী অতীন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। দীর্ঘদিন ধরেই স্নায়ুরোগে ভুগছে সে। বারবার জ্ঞান হারানোয় সোমবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের আপদকালীন বিভাগে ভর্তি ছিল সে। এ দিন সকাল থেকেই তার অক্সিজেন চলছিল। ওয়ার্ডের কর্মীরা জানান, সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফের অজ্ঞান হয়ে যায় ওই কিশোরী। পাশেই চিলেন স্বপ্নাদেবী। মেয়ের বিছানার পাশে বসে দেশলাই দিয়ে নিজের কাপড়ের খুঁট ছিঁড়ে আগুন ধরান তিনি। তারপরে ওই কাপড় মেয়ের নাকের সামনে ধরেন। মুহূর্তের মধ্যেই অক্সিজেন মাস্ক জ্বলে উঠে। পুড়ে যায় নবনীতার নাকের নীচ থেকে থুতনি পর্যন্ত অংশ। আগুন দেখে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় অন্য রোগীদের মধ্যেও। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে দ্রুত অক্সিজেনের সিলিন্ডার বন্ধ করে পোড়া সাড়ির টুকরো ফেলে দেন ওয়ার্ডে কর্মরত তিন-চার জন নার্স ও কর্মী।

ওয়ার্ডের অন্য রোগীদের অভিযোগ, আগুন জ্বালানোর সময় দু’একজন স্বপ্নাদেবীকে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি কান দেননি। অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেটে গেলে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটতে পারত বলেও তাঁদের দাবি। জানা গিয়েছে, নবনীতার বাবা বলরাম মজুমদার স্থানীয় এক হোটেলের কর্মী। তবে এ দিন হাসপাতালে আসেননি তিনি। সীতাহাটি পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বলরাম আগে কলকাতার হোটেলে কাজ করত বলেই শুনেছি। পাশের জেলার এক ওঝার কাছে প্রায়ই ওই পরিবারের যাতায়াত ছিল বলে শুনেছি। অজ্ঞতার কারণে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’ এলাকায় এ সব ঝাড়ফুঁকের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচার চালানো হবে বলেও তাঁর দাবি।

এ দিকে নিষেধ সত্ত্বেও হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতর দাহ্য বস্তু নিয়ে রোগীর আত্মীয় কী ভাবে ঢুকছেন, উঠছে সে প্রশ্ন। সম্প্রতি হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়াতে বাইরের অংশে ২৪টি নতুন সিসিটিভি বসেছে। ওয়ার্ডেও পর্যাপ্ত সিসিটিভি এবং নিরাপত্তরক্ষী রয়েছেন। তার পরেও কেন এমন ঘটল উঠছে সে প্রশ্ন। হাসপাতালের সুপার রতন শাসমলের যদিও দাবি, ‘‘ওই ওয়ার্ডে ৮০টি শয্যা রয়েছে। কোন রোগীর আত্মীয় হাতের মুঠোয় দেশলাই নিয়ে ঢুকছেন তা দেখার মতো পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে। রোগীর আত্মীয়দের সচেতন হওয়া জরুরি।’’ যদিও ওই কিশোরীর মায়ের দাবি, হাসপাতালের এক কর্মীর কাছ থেকেই দেশলাই চেয়ে আগুন জ্বালিয়েছিলেন তিনি।

Fire Injury Shaman Teenage Girl Superstition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy