Advertisement
২১ মে ২০২৪

তিন মিনিটেই মন্দির ফাঁকা

ঘড়ি ধরে ৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। তার মধ্যেই নিখুঁত হিসেবে তালা ভেঙে মন্দিরে ঢুকে দেবীমূর্তির গয়না ও প্রণামীর বাক্স নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের দাস্তিপাড়া গ্রামে ওই মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজে ছবি উঠেছে চুরির। বোঝা যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের মুখের আদল।

বাঁ দিকে, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে চুরির ছবি। ডান দিকে, সকালে পূর্বস্থলীর মন্দিরে ভিড় গ্রামবাসীদের। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে চুরির ছবি। ডান দিকে, সকালে পূর্বস্থলীর মন্দিরে ভিড় গ্রামবাসীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩২
Share: Save:

ঘড়ি ধরে ৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। তার মধ্যেই নিখুঁত হিসেবে তালা ভেঙে মন্দিরে ঢুকে দেবীমূর্তির গয়না ও প্রণামীর বাক্স নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের দাস্তিপাড়া গ্রামে ওই মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজে ছবি উঠেছে চুরির। বোঝা যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের মুখের আদল। শুধু তাই নয়, ‘অতি ভক্তির’ লক্ষণ দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা যে মন্দিরে ঢোকার আগে জুতোও খুলেছিল তাও দেখা গেল ক্লোজজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মন্দিরের তালা ভেঙে ঢুকে বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না ও নগদ হাজার চল্লিশেক টাকা নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। নাদনঘাট থানায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও জানান তাঁরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর শীত পড়লে মন্দিরে চুরির ঘটনা বাড়ে। ২০১৪ সালে মন্তেশ্বরে ২০টিরও বেশি মন্দিরে চুরি হয়েছিল। এ বার শীত আসার বহু আগেই চুরি শুরু হয়ে গেল বলে তাঁদের দাবি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সন্তোষী পুজো হয় গ্রামে। প্রথমে বাজার এলাকায় প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম শুক্রবার পুজো হতো। কিন্তু এ বছর গ্রামেরই এক ব্যবসায়ী মন্দির তৈরি করে দেন। লাগানো হয় পাঁচটি সিসিটিভি। ১৪ এপ্রিল মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে দেবীর নিত্যসেবা শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি সন্ধ্যায় নাম সংকীর্তনের আসর বসত। মন্দির খোলা থাকত রাত নটা পর্যন্ত। যদিও রবিবার পৌনে নটা নাগাদ মন্দিরের লোহার গেট এবং কাঠের দরজা বন্ধ করে দেন গ্রামের সুবোধ দাস নামে এক যুবক। সকালে গ্রামবাসীরা দেখেন, মন্দিরের লোহার গেটের তালা ভাঙা। ভিতরে মূর্তির গা থেকে উধাও সোনার গয়না। এমনকী, বিগ্রহের সামনে রাখা ভারী প্রণামীর বাক্সও উধাও। যদিও পরে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে একটি ইটভাটার সামনে প্রণামীর বাক্সটি খালি অবস্থায় উদ্ধার হয়। পুলিশের কাছে গ্রামবাসীরা জানান, সোনার হার, টিকলি, চোখ, নুপূর, হাতের বালা, চুড়ি সবই চুরি গিয়েছে। প্রায় ১২ ভরি সোনা ছিল বলেও তাঁদের দাবি। এ ছাড়াও প্রতি মাসে প্রণামীর বাক্সে ৬ থেকে সাত হাজার টাকা জমা হতো। সাত মাস বাক্স খোলা না হওয়ায় প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা ছিল বলেও জানান তাঁরা।

মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজে অবশ্য দুষ্কৃতীদের গতিবিধি অনেকটাই দেখা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, সিসিটিভি অনুযায়ী ভোর তিনটে সাত মিনিট নাগাদ প্রথমে মন্দিরের সামনের রেলিং দিয়ে ভেতরো ঢোকে দুই দুষ্কৃতী। তাদের পরনে ছিল হাফ প্যান্ট এবং গায়ে উত্তরীয়। দুজনেই ঢোকার মুখে প্রণাম করে সোজা চলে আসে মন্দিরের লোহার গেটের সামনে। তালা ভাঙার সময় দেখা যায় আরও দুই দুষ্কৃতীকে। তারপরে টর্চ নিয়ে সোজা তারা পৌঁছে যায় মূর্তির কাছে। গয়না খুলে কাঁধের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেও দেখা যায়। তারপরে প্রণামীর বাক্সটি দু’জন ধরে মন্দিরের বাইরে চলে যায়। পুলিশের দাবি, এত কম সময়ে কাজ শেষ করে ফেলা দেখে মনে হচ্ছে আগে থেকেই খুঁটিনাটি জেনে এসেছিল দুষ্কৃতীরা।

মন্দিরের পুরোহিত সুনীলকুমার রায় বলেন, ‘‘বেশির ভাগ গয়নায় দেবীকে মানত করে কেউ না কেউ দিয়েছিলেন। এক দিনে সব চলে যাবে কেউ ভাবতে পারিনি।’’ মন্দির কমিটির সম্পাদক উত্তম দাসেরও দাবি, ‘‘মন্দিরের সঙ্গে গোটা গ্রামের আবেগ জড়িয়ে। আমরা চাই দ্রুত অপরাধীদের ধরা হোক।’’ সম্প্রতি এলাকার ক্লাব ঘরেও চুরি হয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা। তারও কোনও কিনারা হয়নি। যদিও নাদনঘাট থানার দাবি, ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE