Advertisement
E-Paper

কালনার বিধবা খুনে ধৃত ভাড়াটে

পুলিশের দাবি, প্রথমে ধৃতেরা মুখ খুলতে চাননি। তবে কালনার ওসি প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেরায় তারা ভেঙে পরে কবুল করে যে, বিধবার জমানো নগদ অর্থ ও সোনা লুঠের উদ্দেশ্যেই এই খুন। জেরায় পুলিশকে শুভদীপ জানিয়েছেন, একটা সময় তাঁদের পারিবারিক অবস্থা ভাল ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০২:১৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ঘরে রাখা চৌকির পায়ার সঙ্গে প্রায় গোটা শরীরটাই দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। ওই অবস্থাতেই পাওয়া গিয়েছিল প্রৌঢ়া বিধবা উত্তরা কর্মকারের দেহ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, খুব কষ্ট দিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে। ঠিক এগারো মাস আগের ওই ঘটনা নাড়া দিয়ে গিয়েছিল কালনা শহরকেই।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের ৬ অগস্ট সকালে শহর লাগোয়া নিউ মধুবন এলাকার বাসিন্দা উত্তরাদেবীর দেহ মেলে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিহত বৃদ্ধার বাড়িতে ভাড়া থাকেন শুভদীপ চট্টোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী ও নাবালক ভাই। কিছুটা দূরে অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন শুভদীপের মা, বাবা ও দিদা। ঘটনার পর থেকেই শুভদীপ-সহ গোটা পরিবার বেপাত্তা থাকায় পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ গিয়ে পড়ে তাঁদেরই উপরে। কিন্তু, কিছুতেই শুভদীপের খোঁজ মিলছিল না। শেষে রবিবার নদিয়ার তাহেরপুর থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে শুভদীপকে। তাঁকে জেরা করে ধরা হয় শুভদীপের শ্যালক বুদ্ধেশ্বর অধিকারী এবং ভাইকেও। ধৃতদের সোমবার কালনা আদালতে তোলা হলে শুভদীপ ও বুদ্ধেশ্বরের ৮ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ধৃত নাবালককে পাঠানো হয়েছে আড়িয়াদহ হোমে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃতেরা খুনের কথা কবুল করেছে।

পুলিশের দাবি, প্রথমে ধৃতেরা মুখ খুলতে চাননি। তবে কালনার ওসি প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেরায় তারা ভেঙে পরে কবুল করে যে, বিধবার জমানো নগদ অর্থ ও সোনা লুঠের উদ্দেশ্যেই এই খুন। জেরায় পুলিশকে শুভদীপ জানিয়েছেন, একটা সময় তাঁদের পারিবারিক অবস্থা ভাল ছিল। কালনা শহরে বড় বাড়িও ছিল। তবে খুনের ঘটনাটি ঘটার বছর খানেক আগে থেকেই চরম অর্থভাব দেখা দেয় পরিবারে। বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। এমনকী, পেটের টানে বৃদ্ধা দিদাকে ভিক্ষাও করতে হত রাস্তায় নেমে। শুভদীপ সেই অর্থে কোনও কাজকর্মও করতেন না। পুলিশকে শুভদীপ জানিয়েছেন, বাড়িওয়ালি উত্তরাদেবীর কাছে তাঁদের ১০ হাজার টাকা ঋণ ছিল। বাড়ি ভাড়া বাবদও পাওনা হয়েছিল আরও তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া, নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকাতেও কিছু ধার হয়ে গিয়েছিল।

পুলিশের দাবি, শুভদীপ, বুদ্ধেশ্বর জানিয়েছেন, অর্থাভাব ঘোচাতেই বৃদ্ধার টাকা ও সোনার গয়না লুঠের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। তবে, তাঁকে খুন করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। গত বছর ৫ অগস্ট ঘরের নানা জিনিসপত্র সমেত শুভদীপ তাঁর মা, বাবা ও দিদাকে পাঠিয়ে দেন শান্তিপুরে। বাড়িতে ডেকে নেন বুদ্ধেশ্বরকে। রাতে তাঁরা দু’জন এবং শুভদীপের নাবালক ভাই উত্তরাদেবীর ঘরে ঢুকে টাকা ও গয়না হাতানোর সময় বছর ষাটেকের প্রৌঢ়ার ঘুম ভেঙে যায়। চেঁচামেচি শুরু করেন। তখনই গলা টিপে উত্তরাদেবীকে খুন করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে কিনা, নিশ্চিত না হওয়ায় ওই বিধবার মুখ এবং শরীরের নানা অংশ দড়ি দিয়ে তক্তার সঙ্গে বেঁধে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেন শুভদীপেরা। সঙ্গে নিয়ে যান বৃদ্ধার জমানো নগদ ২৭ হাজার টাকা আর ভরি দুয়েক সোনা।

পুলিশের নজর এড়াতে ঘটনার পর থেকে নানা জায়গায় পরিবারের লোকজনেদের নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন শুভদীপ। পুলিশ জানতে পারে, তাঁর শ্বশুরবাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরে। তবে বার চারেক সেখানে গিয়েও পুলিশ তাঁদের হদিস পায়নি। সম্প্রতি পুলিশের কাছে খবর পৌঁছয়, শুভদীপ, তাঁর স্ত্রী, শিশুপুত্র ও ভাই তাহেরপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। পুলিশ রবিবার সেখানে হানা দেয়।

Tenant arrest murder case murder Kalna কালনা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy