ঘটনা ১: চার তলা পেল্লায় বাড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের। অথচ তাঁর নাম ছিল আবাস যোজনার তালিকায়। খণ্ডঘোষের এই ঘটনার কথা সংবাদপত্রে বেরোতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষ্ময় প্রকাশ করেছিলেন।
ঘটনা ২: আবাস-প্রকল্পের ঘর দখল করে তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের কার্যালয়। অথচ প্রকল্পের প্রাপকের রাত কাটছিল বাঁধের ধারে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয়।
ঘটনা ৩: গলসির এক পঞ্চায়েত প্রধানের পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস প্রকল্পে নাম ছিল স্ত্রীর।
২০২২ সালে আবাস প্রকল্পের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করতে গিয়ে এই ধরনের বেশ কিছু উদাহরণ নজরে আসে প্রশাসনের। ২০১৮ সালের মূল তালিকা থেকেই সেই সব নাম বাদ দেওয়া হয়। তালিকা পাঠানো হয় কেন্দ্রে। যদিও কেন্দ্র সরকার ওই প্রকল্পে কোনও টাকা বরাদ্দ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে আবাস-প্রকল্পে ১১ লক্ষের মতো বাড়ি তৈরি করবেন বলে জানান। আগামী মাসের শেষ দিক থেকে টাকা ‘যোগ্য’ প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা। তার আগে ফের সমীক্ষায় নেমে তালিকায় নাম থাকা জনপ্রতিনিধিদের পাকা বাড়ির সন্ধান পাচ্ছেন সমীক্ষকেরা। প্রশাসনের একাংশের ধারণা, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপেই জনপ্রতিনিধি কিংবা তাঁর ঘনিষ্ঠদের পাকা বাড়ি থাকার পরেও আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়ে গিয়েছে। এ বার তাই মুখরক্ষা করতে কসুর করছে না তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সিদ্ধান্ত, সমীক্ষকরা নাম বাদ দেওয়ার আগেই পাকা বাড়ির মালিক জনপ্রতিনিধিরা যেন স্বেচ্ছায় তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন জানান।
দলের জেলা সভাপতি, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যে সব জনপ্রতিনিধি বর্তমান সময়ের মধ্যে পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন, কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক ২০১৮ সালে তৈরি আবাসের মূল তালিকায় তাঁদের নাম রয়ে গিয়েছে, তাঁদের কাছে অনুরোধ, সমীক্ষকদের আগেই আবাস প্রকল্পের বাড়ি নেব না বলে প্রশাসনকে জানিয়ে দিন।’’
ইতিমধ্যে আউশগ্রামের এক পঞ্চায়েত প্রধান ‘বাড়ি নেব না’ বলে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। খণ্ডঘোষের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলামেরও দাবি, “২০২২ সালে একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এ বার দলের জনপ্রতিনিধি তো বটেই পদাধিকারী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদেরও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।”
যদিও বিরোধীদের দাবি, আবাস যোজনার সমীক্ষায় তৃণমূলের নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের নাম এখনও মিলছে। নিয়ম শিথিল করার পরেও অট্টালিকার খোঁজ পেয়েছেন সমীক্ষকেরা। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বোঝানো হচ্ছে, প্রশাসনের তৈরি তালিকায় দলের হাত নেই। কিন্তু বাস্তবে গ্রামের মানুষ জানেন, তৃণমূলের ইশারাতেই তালিকা হচ্ছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, “আমরা নজরে রাখছি। সময় হলেই সব প্রকাশ পাবে।” বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “২০২২ সালের তালিকা তৈরির পরে বলা হয়েছিল, নির্ভুল তালিকা। এখন সমীক্ষকরা গিয়ে পাকা বাড়ি দেখছেন। এ বারেও ভুয়ো তালিকা তৈরি হবে।”
তৃণমূল জেলা সভাপতির অবশ্য দাবি, ‘‘২০১৮ সালে যাদের কাঁচা বাড়ি ছিল, তৃণমূল আমলে আর্থিক উন্নতির ফলে অনেকেই এই ছ’বছরে পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন। স্বচ্ছ্ব তালিকা পেতেই সমীক্ষা হচ্ছে। বিরোধীরা অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি করছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)