Advertisement
E-Paper

হাসপাতালের তিন তলায় জমিয়ে পিকনিক চিকিৎসক, নার্সদের! ঠায় বসে বসে বাড়ি ফিরলেন রোগীরা

সকালে আউটডোরে চিকিৎসকদের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। চিকিৎসকদের খোঁজে রোগীর পরিজনেরা। কিন্তু কারও দেখা নেই। সবাই তখন তিন তলায় বর্ষবরণের আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০০
The Doctors and nurses are in picnic mood in Hospital Premises in Paschim Bardhaman

(বাঁ দিক থেকে) প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রোগীরা অপেক্ষায়। হাসপাতালের তিন তলায় চলছে পিকনিক। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি প্রসূতিরা। আউটডোরে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় বসে রোগীরা। কিন্তু তাঁদের দেখবে কে? শরীরের সমস্যার কথা বলবেনই বা কাকে? একটা গোটা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই ব্যস্ত বর্ষবরণের পিকনিকে। সোমবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমান জেলার অণ্ডাল এবং পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের খান্দরা (উখরা) গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

সোমবার ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন খান্দরা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা গেল অন্য রকম ছবি। সকালে আউটডোরে চিকিৎসকদের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। চিকিৎসকদের খোঁজে রোগীর পরিজনেরা। কিন্তু হাসপাতালের কারও দেখা নেই। আউটডোরে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করে অনেক রোগী হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু ব্যাপারটা কী?

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিন তলায় রয়েছেন সব চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী। ছাদে লাইন করে প্লাস্টিকের চেয়ার এবং টেবিল পাতা। এক ধারে লাইন করে রাখা বিভিন্ন খাবারের পদ। আসলে হাসপাতালের সকলে ব্যস্ত পিকনিকে। তিনতলায় জমাটি ভূরিভোজের আয়োজন হয়েছে। রোগীরা যখন চিকিৎসক এবং নার্সদের খুঁজছেন,তাঁরা তখন কব্জি ডুবিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সারছেন। চলছে গল্প-আড্ডা। হাসপাতালের ছাদে চিকিৎসক এবং নার্সদের পিকনিকে ছিল ভাত, মিক্সড ভেজ কারি, বেগুনি, মুগের ডাল, মাছের ঝোল, মটন কারি, চাটনি, পাঁপড় এবং মিষ্টি । সব মিলিয়ে ৩০ জনের জন্য খাবারের আয়োজন ছিল।

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালের ছাদে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। তাঁদের দেখামাত্রই কেউ কেউ খাওয়া দাওয়া ছেড়ে উঠে গেলেন। কেউ এক দৌড়ে তিন তলা থেকে সিঁড়ি ভেঙে নিচে চলে যান। কেউ কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তিন তলায় ওই পিকনিক চলাকালীন এক তলায় প্রসূতি বিভাগে ভর্তি দময়ন্তী কুমারী নামে রোগী বলেন, ‘‘অন্য দিনের মতো আমাকে খেতে দেওয়া হয়েছে। তবে সকালে এক বার চিকিৎসক সবাইকে দেখে যান। তার পর আর কেউ আসেননি।’’ শিশুকন্যাকে নিয়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে অপেক্ষায় ছিলেন জনৈক ভোলা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন রোগী। চিকিৎসকের জন্য অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করেও কারও দেখা পাননি তাঁরা। চিকিৎসা না করিয়ে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদের।

এ নিয়ে জোর রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে। বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য এখন মোচ্ছবে মেতেছে। রোগীর ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকেরা বেমালুম চেপে যান। স্বাস্থ্যর মতো শিক্ষাব্যবস্থাও তাই হয়েছে।’’ ঘটনার সমালোচনায় মুখর স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সমাজের উচ্চ পর্যায়ের মানুষরা যদি এমন চেতনাহীন কাজ করেন তা হলে আর কী করা যায়। আখেরে সমাজেরই ক্ষতি হয় এতে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আশা করব, এই রকমের কাজ ভবিষ্যতে করবেন না এই পেশার লোকজন।’’ কিন্তু এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা কি নেওয়া হচ্ছে? পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘‘চিকিৎসা কেন্দ্রের ভিতরে পিকনিক করাটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’’

New Year 2024 Patients Doctors Picnic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy