Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Covid Infection

প্রৌঢ়কে ভর্তি করাল পিপিই পরা পুলিশ

বছর ৫৮-র প্রৌঢ় পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শ্বাসকষ্টে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। করোনা পরীক্ষা হয়নি শুনে বাড়িতে যেতে পারেননি পড়শিরা।

রূপনারায়ণপুরের রূপনগরে। বৃহস্পতিবার রাতে।

রূপনারায়ণপুরের রূপনগরে। বৃহস্পতিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রূপনারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৮:৫২
Share: Save:

বছর ৫৮-র প্রৌঢ় পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শ্বাসকষ্টে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। করোনা পরীক্ষা হয়নি শুনে বাড়িতে যেতে পারেননি পড়শিরা। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাকি যাঁরা সুস্থ আছেন, তাঁরাও দ্রুত পৌঁছতে পারেননি। শেষমেশ, পড়শিদের ফোন পেয়ে রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা এসে ওই প্রৌঢ়কে হাসপাতালে ভর্তি করান। বৃহস্পতিবার রূপনারায়ণপুরের রূপনগরের ঘটনা।

পেশায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অস্থায়ী কর্মী পূর্ণচন্দ্রবাবু স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন। স্ত্রী গৌরীদেবী জানান, তাঁর স্বামী গত কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে টোটকা ওষুধ দিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ওই দিন সকাল থেকে প্রৌঢ়ের শ্বাসকষ্ট তীব্র হতে শুরু করে। গৌরীদেবী জানান, দিনভর কোনও ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পড়শিরা সালানপুরের পিঠাইকেয়ারি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফোন করে অবস্থার কথা জানান।

গৌরীদেবীর অভিযোগ, প্রায় এক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা মেলেনি। দ্রুত পূর্ণচন্দ্রবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সন্ধ্যা ৮টা নাগাদ ফের কয়েকজন পড়শিই রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে ফোন করেন। ফাঁড়ির আইসি প্রসেনজিৎ রায় জানান, তাঁরা পিঠাইকেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পিপিই কিট আনিয়ে, সেগুলি পরে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে পূর্ণচন্দ্রবাবুর বাড়িতে যান। তাঁকে রাত ৯টা নাগাদ আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। পরীক্ষার ফল এখনও আসেনি। তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

পুলিশের এই ভূমিকায় খুশি গৌরীদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘খুবই অসহায় লাগছিল। কিন্তু সমস্যার সমাধান করলেন পুলিশকর্মীরা। আমরা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ। পড়শিরাও পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার মিতেশ জৈন বলেন, ‘‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। খবর পেলে এ ভাবেই পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত মাজি, আশুতোষ সুরদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ খুব ভাল ভূমিকা নিয়েছে। পড়শিরাও ফোনেই যতটা পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন, করেছেন।

কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে কেন স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছতে পারলেন না কেন? বিএমওএইচ (সালানপুর) সুব্রত সীট বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে প্রায় ১৭ জন করোনা আক্রান্ত। তাই স্বাস্থ্যকর্মী জোগাড় করে ওই ব্যক্তির বাড়ি যেতে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে পুলিশকর্মীরা যাচ্ছেন শুনে আমরা হাসপাতাল থেকে পিপিই কিট পাঠিয়েছি।’’ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে, তেমন হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের আর্জি, শ্বাসকষ্টের মতো কোনও রকম উপসর্গ দেখা গেলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Covid Infection COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE