সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল, বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশু ও কিশোরদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও সহায়ক ব্যবস্থা করা হবে। রিসোর্স সেন্টারও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ শিক্ষক সংগঠন’ জানাচ্ছে, জেলায় বিশেষ শিক্ষকের সংখ্যা এই মুহূর্তে মাত্র কুড়ি জন। রাজ্যে বিশেষ শিক্ষকের ঘাটতি ৪১,০০৩ জন। ফলে, পড়ুয়া-স্বার্থ আদৌ কতটা রক্ষিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল।
সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা ২০১৫-য় রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে স্থায়ী ভাবে বিশেষ শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল। ২০২১-এর ২৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রতিটি স্কুলে এক জন করে স্থায়ী বিশেষ শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেয়। আদালতে রাজ্য জানিয়েছিল, প্রথম ধাপে ২০২৩-এর মার্চের মধ্যে ৫,২৪৮ জনকে সরাসরি এবং সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পের অধীনে ১,১০১ জন বিশেষ শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি বলেই অভিযোগ সংগঠনটির।
২০২২-এর জুনে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানায়, ৪২,১৩২টি স্কুলে মোট এক লক্ষ ৩৬ হাজার বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত। জেলা প্রশাসনের হিসাবে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় সংখ্যাটা ২,৭৫৪ জন। অথচ, সংগঠনটির দাবি, গত ১৩ বছর ধরে রাজ্যে বিশেষ শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। রাজ্যে এই মুহূর্তে সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র ১,১২৯ জন বিশেষ শিক্ষক অস্থায়ী ভাবে কাজ করছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ীই দরকার ৪২,১৩২ জন শিক্ষক। ঘাটতি ৪১,০০৩ জনের।
সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলায় কমপক্ষে ১৫০ জন বিশেষ শিক্ষক দরকার। আছেন মাত্র ২০ জন। সব জেলাতেই এই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন কী ভাবে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা ভেবে পদক্ষেপ করবে, তা জানি না।” এমনকি, ওই পড়ুয়াদের দু’বছর ধরে ফিজিয়োথেরাপির শিবিরও ঠিক ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
সমস্যার কথা জানাচ্ছেন ওই কুড়ি জন বিশেষ শিক্ষকদের একাংশও। সালানপুরের মোহন মণ্ডল বিশেষ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। মোহন বলেন, “একা ১১টি ‘রিসোর্স রুম’-এর দায়িত্ব পালন করতে হয়। ২২৯ জন পড়ুয়া আছে। খুবই অসুবিধা হয়। দ্রুত নিয়োগ দরকার। সব থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের।”
পাশাপাশি, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নন্দরাম মণ্ডল জানাচ্ছেন, রাজ্যে ১০ হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ শিক্ষক আছেন। কিন্তু নিয়োগ না হওয়ায় তাঁরা বঞ্চিত। তাঁদের দাবি, এই শিক্ষকদের রাজ্য যদি সরাসরি নিয়োগ না-ও করতে পারে, তা হলে অন্তত যেন সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়। এই দাবিতে এবং যাবতীয় সমস্যার সমাধান চেয়ে সংগঠনটি আগামী ৩ ডিসেম্বর ধর্মতলা, বিকাশভবন এবং নবান্নের সামনে বিক্ষোভ দেখাবে বলে জানা গিয়েছে।
নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি জেলা শিক্ষা দফতর। তাদের দাবি, বিষয়টি রাজ্যের আওতাধীন। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের স্বার্থ লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি জেলা শিক্ষা অধিকর্তা তথা এগ্জ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তমোজিৎ চক্রবর্তী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জবাব পাওয়া যায়নি মেসেজেরও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)