E-Paper

প্রয়োজন ২২, জঙ্গল আছে মাত্র ৪ শতাংশ

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা, পরিবেশবিদ থেকে বনকর্তারা সবাই মনে করছেন, জেলার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত বনাঞ্চল তৈরিতে পদক্ষেপ করা দরকার।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৯
An image of a forest

জামুড়িয়ার নীলবন এলাকায় বনাঞ্চল দখলের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

প্রতি বছরই পশ্চিম বর্ধমানে তাপমাত্রা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে শিল্প-প্রধান এই জেলার নানা প্রান্তে বাড়ছে দূষণও। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য পরিকল্পিত বনাঞ্চল তৈরির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে সংশ্লিষ্ট সব মহলই। কিন্তু বন দফতরের দুর্গাপুর ডিভিশন সূত্রেই জানা যাচ্ছে, যে কোনও জেলায় মোট ভৌগোলিক আয়তনের অন্তত ২২ শতাংশ বনাঞ্চল হওয়া দরকার। সেখানে এই জেলায় বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র চার শতাংশ।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা, পরিবেশবিদ থেকে বনকর্তারা সবাই মনে করছেন, জেলার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত বনাঞ্চল তৈরিতে পদক্ষেপ করা দরকার। কারণ, আরও নানা কারণের সঙ্গে বনাঞ্চলের অভাবের ফলে দূষণ ও তাপমাত্রা বাড়ছে। চলতি বছরেও এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণও। চলতি বছরেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও সম্প্রতি রাজ্যের ছ’টি শিল্পাঞ্চলকে অতিমাত্রায় দূষণ-প্রবণ বলে সতর্ক করেছিল। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল আসানসোল শিল্পাঞ্চল। পর্ষদের তরফে আসানসোল পুরসভায় একটি আলোচনাসভাতেও বিশেষজ্ঞেরা আসানসোল শিল্পাঞ্চলকে অতিমাত্রায় ‘দূষণ-প্রবণ’ বলে উল্লেখ করেন। এর অন্যতম কারণ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং বনাঞ্চল কম থাকা, মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিবেশবিদ মানস প্রমাণিক, উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায়দেরও পর্যবেক্ষণ, “এই শিল্পাঞ্চলে গাছের সংখ্যা কম।”

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? উঠে আসছে তিনটি কারণ— প্রথমত, সপ্তর্ষি ও মানসদের পর্যবেক্ষণ: “যেটুকু বনাঞ্চল ছিল, তা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কেটে ফেলা হয়েছে। পর্যপ্ত সংখ্যায় বৃক্ষরোপণ হচ্ছে না।” দ্বিতীয়ত, তাঁদের অভিযোগ, প্রতি বছর ঘটা করে বনসৃজন করা হয়। কিন্তু গাছ রক্ষা সে ভাবে করা হয় না। অবৈধ ভাবে বৃক্ষ নিধন চলছে। বিষয়টি জানা যাচ্ছে বনকর্তাদের কথা থেকেও। তাঁরাও জানাচ্ছেন, বনাঞ্চল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিপুল সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা জানান, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বনাঞ্চলে অন্তত ৩০টি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের ২৮ ও ২৯ জানুয়ারিও যথাক্রমে বারাবনির পানুড়িয়া ও হোশেনপুড়ার বনাঞ্চলে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। তাতে কয়েক হাজার গাছ পুড়ে যায়। বন দফতরের তদন্তে উঠে আসে, এর নেপথ্যে রয়েছে কাঠ চোরেরা। এ ছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চৌহদ্দিতে থাকা পূর্ণ বয়স্ক গাছ অবৈধ ভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে বলেও বন দফতর সূত্রে অভিযোগ। সম্প্রতি ইসিএলের সালানপুর এরিয়ার কার্যালয়ে একাধিক পূর্ণবয়স্ক গাছ কেটে ফেলা হয়। এই ঘটনার তদন্তে নেমে কাটা গাছ উদ্ধার করেন বনকর্তারা। ইসিএল-ও পৃথক তদন্তে নামে। তৃতীয়ত, বনাঞ্চলের জমি-দখল। দিন কয়েক আগে জামুড়িয়ার নীলবন এলাকায় বনাঞ্চল দখল করার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছিল বন দফতর। বন দফতরের ডিএফও (দুর্গাপুর) বুদ্ধদেব মণ্ডলের বক্তব্য, “ওই এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমি দখল করা হয়েছে। জামুড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।” জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফে জেলার বনাঞ্চল তৈরি এবং সংরক্ষণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েই রয়েছে কৌতূহল। (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Deforestatiion hot temperature Asansol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy