Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শংসাপত্রের কী হবে, প্রশ্ন অনেক জয়ীর

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ওই বিজয়ীদের জয়ের শংসাপত্র দেওয়ার উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের বড় অংশের মনেই এখন সংশয়ের মেঘ। তবে, ১৪ মে ভোট হওয়ার পথে আর কোনও বাধা না থাকায় সার্বিক ভাবে রায়ে খুশি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

পায়ে-পায়ে: দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূলের মিছিল, বৃহস্পতিবার কালনায় বৈদ্যপুরের গোপালদালপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

পায়ে-পায়ে: দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূলের মিছিল, বৃহস্পতিবার কালনায় বৈদ্যপুরের গোপালদালপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:২৭
Share: Save:

ভোটের আগেই জেলার পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরের বহু আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন শাসক দলের প্রার্থীরা। ওই সব আসনের বহু প্রার্থীর হাতে প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই তুলে দেওয়া হয়েছে জয়ের শংসাপত্র। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ওই বিজয়ীদের জয়ের শংসাপত্র দেওয়ার উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের বড় অংশের মনেই এখন সংশয়ের মেঘ। তবে, ১৪ মে ভোট হওয়ার পথে আর কোনও বাধা না থাকায় সার্বিক ভাবে রায়ে খুশি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে এ দিন মুখ খুলেছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। পূর্ব বর্ধমানে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মোট ৩২৩৪টি আসনের মধ্যে ২০৯৬টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৮টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টি এবং জেলা পরিষদের ৫৮টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনে শুধু মাত্র শাসকদলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা পড়েছিল। ওই আসনগুলিতে ভোট না হওয়ায় জিতে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। গোটা কাটোয়া মহকুমাই ছিল বিরোধী-শূন্য। ওই মহকুমার সমস্ত আসনের জয়ী শাসক-প্রার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শংসাপত্র। জেলা পরিষদের আসনগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা প্রার্থীরাও প্রশাসনের শংসাপত্র পেয়েছেন। কোনও কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় বিজয় মিছিলও বের করেছিল তৃণমূল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়ী প্রার্থীদের অনেকেই এ দিন হতাশ সুরে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে আমাদের শংসাপত্রের আর কোনও মূল্য রইল না।’’ যদিও জেলা তৃণমূলের নেতা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি দেবু টুডুর বক্তব্য, যাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কোনও রায় দেয়নি।

একই সঙ্গে ই-মনোনয়ন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে, হাইকোর্টের নির্দেশের পরে বিরোধী শিবির যে ভাবে ভোট পিছিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশার আলো দেখেছিল, তা-ও জোর ধাক্কা খেয়েছে। মুখে যদিও তাঁরা তা স্বীকার করছেন না। বরং বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের দাবি, প্রথম থেকেই তাঁদের দলের তরফে জানানো হচ্ছিল, শাসক দলের সন্ত্রাসের জেরেই বহু আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। বিনা লড়াইয়ে জেতা আসনগুলিতে আদালতের স্থগিতাদেশে বিরোধীদের সেই অভিযোগই মান্যতা পেল। রাজীববাবুর কথায়, ‘‘এ দিনের রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভোটে যে রক্ত ঝরার সম্ভাবনা ছিল, তা সর্বোচ্চ আদালতও অনুভব করেছে। সে জন্য সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক আবার মনে করেন, আদালত যথাযথ রায় দিয়েছে। ভোট শেষ হওয়ার আগেই জয়ের শংসাপত্র দেওয়া তো ‘নৈরাজ্য’। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জোর করে বহু আসন দখল করে নেওয়া হয়েছিল। আদালতের রায়ে কোথাও আর শংসাপত্র দেওয়া যাবে না। আপাতত যে সমস্ত আসনে দলীয় প্রার্থী রয়েছে, সেখানে জয়ের জন্য ঝাঁপাব। যে সব আসনে জয় স্থগিত রয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধা নেওয়া হবে।’’ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্যেরও দাবি, আদালতের নির্দেশে শাসক দলই অস্বস্তিতে। আদালত যে ভাবে ভোটে নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশে, তাতে স্বস্তি পাবেন সাধারণ ভোটারেরা।

বিরোধী শিবিরের বক্তব্য শুনে দেবুবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওরা তো ভোট বানচাল করে দিতে চেয়েছিল। সেটা আর হচ্ছে না। আদালতে তাই ওদেরই মুখ পুড়েছে!’’ একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ই-মনোনয়ন নিয়েও বিরোধী দলগুলি অনেক লাফিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট তাতেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE