পড়াশোনা: দুর্গাপুরে ডিএসপি টাউনশিপে দয়ানন্দ রোডে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ছবি: বিকাশ মশান
কেউ কর্মসূত্রে, কেউ বা বিয়ের পরে দুর্গাপুর ছেড়েছেন। কিন্তু ভোলেননি নিজের শহরকে। প্রিয় শহরের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ থেকেই বছর কয়েক আগে ‘শহর ছাড়া’ ওই সব বাসিন্দারা দুর্গাপুরে এসে একটি অনুষ্ঠানে মিলিত হন।
স্কুল-কলেজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অনেকের সঙ্গে সারা বছর দেখা হয় না। তাই ওই সব বন্ধু-বান্ধবরা যেমন বছরের একটা দিন ঠিক করে মিলিত হন, সারাদিন গল্গগুজব, আড্ডা দেন। তেমনি দুর্গাপুর ‘শহর ছাড়া’রাও মিলিত হন। কিন্তু তাঁরা মিলিত হয়ে শুধু সময় নষ্ট করতে চাননি। তাঁদের লক্ষ্য, শহরে ‘সমাজ কল্যাণ’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলা। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘দুর্গাপুর সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন।’ সংস্থার সভাপতি রণজিৎ গুহ বলেন, ‘‘এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাতে বহু খরচ। অনেকেই আর্থিক সহযোগিতা করছেন।’’
ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের দয়ানন্দ রোডে গড়ে ওঠা ওই সংস্থায় সেরিব্রাল পলসি, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, অটিজম, অতি চঞ্চলতা ও অমনোযোগী শিশু, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের বিশেষ প্রশিক্ষণের সাহায্যে শিক্ষাদান, সার্বিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ করা হয়। জন্মকালীন কোনও অসুবিধার জন্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগা ২ সপ্তাহ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ‘আর্লি ইন্টারভেনশন ক্লিনিকে’ বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিশুটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে বাড়িতে বাবা-মা ফিরে গিয়েও তাকে সহযোগিতা করতে পারেন। কাউন্সেলিং বিভাগে কাউন্সিলর বাবা-মায়ের কাউন্সেলিং করে উদ্বেগ দূর করেন এবং শিশুর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্পেশাল এডুকেশন সেন্টারে শিশুরা আসে আর্লি ইন্টারভেনশন ক্লিনিক থেকে। মূলত ৪-১৩ বছর বয়সী শিশুদের এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের গান, নাচ, আঁকা, হাতের বিভিন্ন কাজও শেখানো হয়। ইনক্লুসিভ এডুকেশন সেন্টারে অমনোযোগিতা, অতি চঞ্চলতা, নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা যুক্ত শিশুদের বিশেষ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ১৮ বছর তা তার বেশি বয়সীদের জন্য রয়েছে প্রি-ভোকেশন্যাল ট্রেনিং, ভোকেশন্যাল ট্রেনিং সেন্টার, অ্যাডাল্ট লার্নিং অ্যান্ড লিজর সেন্টার, সেল্ফ অ্যাডভোকেসি গ্রুপ।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক পরিকাঠামো গড়ার জন্য বর্তমানে গোয়াবাসী একজন প্রায় ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেন। পরে নিয়মিত খরচ বাবদ আরও প্রায় চার লক্ষ টাকা দেন তিনি। এ ছাড়াও, আরও কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা অনুদান এসেছে। এখন মোট ১২ জন শিশু এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ২ জন স্পেশাল এডুকেটর, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন অঙ্কন শিক্ষক রয়েছেন। ডাউন সিনড্রোমে (ক্রোমোজম ঘটিত সমস্যা) আক্রান্ত পাঁচ বছরের এক বালিকার মা বা অটিজমে আক্রান্ত সাড়ে তিন বছরের এক বালকের বাবা জানালেন, এক বছর ধরে চিকিৎসার পরে তাঁদের সন্তানের উন্নতি নজরে এসেছে। সংস্থার সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নানান প্রতিকূলতা সঙ্গে নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি। যত তাড়াতাড়ি বাবা-মা সমস্যা আঁচ করে চিকিৎসকের কাছে আসবেন, তত দ্রুত সুস্থ হবে শিশুটি।’’
সংস্থার সভাপতি রণজিৎবাবু জানান, পরিকাঠামোর ধারাবাহিক উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ এবং নিয়মিত খরচ মিলিয়ে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা দরকার। শিশুদের সংখ্যা বাড়লে খরচ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার সাহায্য পেতে, কমপক্ষে তিন বছর সংস্থাটি সাফল্যের সঙ্গে চালাতে হবে। সে জন্য সকলের সহযোগিতা চাইছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy