Advertisement
E-Paper

পুরসভায় সমর্থন তুলল তৃণমূল, অনাস্থায় নারাজ জেলা নেতৃত্ব

স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছেড়ে বেড়িয়ে এল তৃণমূল। মঙ্গলবার বিকালে কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে হাজির হয়ে দাঁইহাট পুরসভার চার তৃণমূল কাউন্সিলর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে চিঠি দিয়ে ‘সমর্থন প্রত্যাহারের’ কথা জানান। কংগ্রেসের পুরপ্রধান সন্তোষ দাসকেও ওই চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। তবে জেলা নেতৃত্ব এখনই অনাস্থা প্রস্তাব আনতে নারাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০০:০৪
সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দিয়ে বেরিয়ে আসছেন কাউন্সিলরেরা।—নিজস্ব চিত্র।

সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দিয়ে বেরিয়ে আসছেন কাউন্সিলরেরা।—নিজস্ব চিত্র।

স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছেড়ে বেড়িয়ে এল তৃণমূল। মঙ্গলবার বিকালে কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে হাজির হয়ে দাঁইহাট পুরসভার চার তৃণমূল কাউন্সিলর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে চিঠি দিয়ে ‘সমর্থন প্রত্যাহারের’ কথা জানান। কংগ্রেসের পুরপ্রধান সন্তোষ দাসকেও ওই চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। তবে জেলা নেতৃত্ব এখনই অনাস্থা প্রস্তাব আনতে নারাজ।

২০১০ সালের পুরভোটে দাঁইহাট পুরসভার ১৪টি আসনে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট করে লড়েছিল। কংগ্রেস ৬টি, তৃণমূল ২টি, সিপিএম ৫টি ও ১টি আসনে নির্দল প্রার্থী জয়ী হন। পরে এক নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে পুরবোর্ড গঠন করে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট। কংগ্রেসের পুরপ্রধান হন সন্তোষ দাস ও উপপুরপ্রধান পদে নিযুক্ত হন তৃণমূলের স্বাধীনা নন্দী। কয়েকমাস আগে কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর সুদীপ্ত রায় ও নির্দল কাউন্সিলর সমর চক্রবর্তী তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে এই মূহুর্তে এই পুরসভায় কংগ্রেসের ৫, সিপিএম ৫ ও তৃণমূলের ৪ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। এ অবস্থায় তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করায় স্বাভাবিক ভাবেই দাঁইহাট পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হতে চলেছে। বোর্ডের ভবিষ্যত অনেকখানি নির্ভর করে রয়েছে পাঁচ সিপিএম কাউন্সিলরের উপর।

তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ‘সমর্থন প্রত্যাহারের’ চিঠি দিলেও জেলা নেতৃত্ব এখনই ওই পুরসভায় অনস্থা প্রস্তাব না-আনারই পক্ষে মত দিয়েছেন। দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে সেই ‘নির্দেশ’ও পাঠিয়েছে জেলা নেতৃত্ব। দলের বর্ধমান জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল বলেন, “আমরা কংগ্রেস পুরপ্রধানের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে সমর্থন প্রত্যাহার করেছি। এক বছর পর পুরসভা নির্বাচন। তার আগে অনাস্থা এনে পুরবোর্ড ভাঙার দায় আমরা নিতে পারি না।” তবে পুরসভা বা পঞ্চায়েতের মতো তৃণমূল স্তরের রাজনৈতিক সমীকরণও অনেকক্ষেত্রেই উপরতলার ‘নির্দেশ’ মতো চলে না।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের লোকসভা ভোটের তুমুল মোদী-ঝড়ের মধ্যেও দাঁইহাটের ১৪টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ বুথে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এ অবস্থায় এক বছর পরে পুরনির্বাচনে জোট ছাড়াই দাঁইহাট পুরসভায় ভাল ফল করার আশায় পুরবোর্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জোট করে পুরবোর্ড গঠন হলেও উন্নয়নের দাবিতে প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন সদ্য বিদায়ী উপপ্রধান স্বাধীনা নন্দী। এ দিন তিনি বলেন, “জোট করে পুরবোর্ড চললেও কংগ্রেস একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। সে জন্যই আমাদের দলের কাউন্সিলরেরা সর্বসম্মত ভাবে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু অনৈতিক ও জনস্বার্থ বিরোধী কাজ হয়েছে, যা মানা যায় না।” কংগ্রেসের পুরপ্রধান সন্তোষ দাস অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “সব অভিযোগই মিথ্যা। সমস্ত কিছু আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” তাঁর দাবি, “শহরে এখন উন্নয়নের গতি এসেছে। রাজনৈতিক কারণে সেই উন্নয়ন স্তব্ধ করার জন্যই কেউ কেউ এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

তবে সিপিএমকে ঠেকাতে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করলেও দাঁইহাটে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্ক কখনই ‘মধুর’ ছিল না। তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, পুরপরিষেবা কর বাড়িয়ে ‘অনৈতিক’ ভাবে একের পর এক অস্থায়ী নিয়োগ করে চলেছে কংগ্রেস। মাসখানেক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদীপ্ত রায়ের অভিযোগ, “প্রদেশ কংগ্রেস সদস্যর ভাইপোকেও সোমবার অ্যাকাউন্টেন্ট পদে নিয়োগ করা হয়েছে। ওই দিনই সাত জনকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।” এছাড়াও টেন্ডার ছাড়াই ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁর দাবি। তৃণমূলের যুব নেতা সুমন দাসের কথায়, “গত ২৯ মে পুরপ্রধান একতরফা ভাবে পুরপরিষেবা কর এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা এই জনবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য জানিয়েছিলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত করা প্রত্যাহার হয়নি।”

তবে পুরপ্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, “পুরসভায় কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। পুর দফতরকে এ নিয়ে আমরা বারবার চিঠি পাঠিয়েছি। পানীয় জল সরবরাহ-সহ অত্যাবশকীয় পরিষেবা দিতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে। সে জন্যই অস্থায়ী ভাবে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য রাধানাথ ভট্টাচার্য বলেন, “আমার ভাইপো দু’বছর আগে অ্যাকাউন্টেট পদে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিল। কিন্তু পুর দফতর নিয়োগপত্র দেয়নি বলে সে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। পুরসভায় দীর্ঘদিন অ্যাকাউন্টেন্ট নেই বলে ওকে সাময়িক ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “আমাদের পুরপ্রধান দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।”

katwa tmc congress dainhat municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy