কর্মীদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে টোল আদায় বন্ধ হয়ে রয়েছে দুর্গাপুরের ডিভিসি ব্যারাজে। ফলে, দৈনিক লক্ষ-লক্ষ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। আবার টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা ঠিকাকর্মীরাও কাজ হারিয়েছেন। বিপাকে পড়েছে প্রায় ৪০টি পরিবার।
১৯৫৫ সালে দামোদরের উপরে এই ব্যারাজটি গড়ে ওঠে। ৬৯২ মিটার লম্বা এই ব্যারাজে গেট ৩৪টি। ব্যারাজ গড়ে ওঠার পরে দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হয়। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে এই রাস্তা। দিনে কয়েক হাজার গাড়ি যাতায়াত করে ব্যারাজ দিয়ে।
ব্যারাজের টোল আদায়ের জন্য ২০১৬ সালের মার্চে টেন্ডার ডাকা হয়। সরকারি মূল্য ছিল দৈনিক ১,৯৭,০০০ টাকা। দৈনিক সর্বোচ্চ ৩,৪১,৩৩২ টাকা দর দিয়ে টোল আদায়ের জন্য নির্বাচিত হয় বাঁকুড়ার বড়জোড়ার একটি সংস্থা। ৯ অগস্ট সংস্থাটিকে সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ এক কোটি ৯০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সেচ দফতর। সংস্থার তরফে জানানো হয়, ১৭ অগস্ট ডিমান্ড ড্রাফটে সেই টাকা জমা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট অন্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরে টোল আদায়ের ছাড়পত্রের দাবি জানায় সংস্থাটি। কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর দামোদর সেচ সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের দফতর থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত টোল আদায়কারী সংস্থা নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে একটি সংস্থা দৈনিক ৮১ হাজার টাকার বিনিময়ে ব্যারাজ থেকে টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছিল। সেটির মেয়াদ বেশ কয়েক বার বাড়ায় সেচ দফতর। এ বছর ৩১ জানুয়ারি সংস্থাটি টোল আদায়ের দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। তার পর থেকে ব্যারাজ দিয়ে গাড়ি চলছে টোল ছাড়াই। বড়জোড়ার সংস্থাটির পক্ষে ডিরেক্টর জয়দেব সিংহবীর বলেন, ‘‘সিকিউরিটি ডিপোজিট এবং টেন্ডারে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের মোট ২ কোটিরও বেশি টাকা পড়ে রয়েছে সরকারের কাছে। এ দিকে টোল আদায়ের দায়িত্বও পাইনি। ফলে, চরম ক্ষতির মুখে আমরা। রাজ্য সরকারও বহু টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’’
টোল আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন দায়িত্বে থাকা প্রায় ৪০ জন ঠিকাকর্মী। রবিবার তাঁদের পরিবারের লোকজন ব্যারাজে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। মিঠু পাল নামে এক কর্মী বলেন, ‘‘ছোট-ছোট রাস্তাতেও টোল বসিয়েছে সরকার। অথচ, এত বড় ব্যারাজে টোল আদায় বন্ধ দিনের পর দিন। আর্থিক সমস্যায় ভুগছে আমাদের সবার পরিবার।’’ তাঁদের অভিযোগ, সেচ দফতরের এক শ্রেণির অসাধু আধিকারিকের জন্য গত কয়েক বছরে দফায়-দফায় ব্যারাজে টোল আদায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নেন সেচ দফতরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘দফতরের নানা ত্রুটির কারণে আগে বারবার টোল আদায় বন্ধ হয়েছে। সেচ দফতরের তরফে এখনই নতুন করে টোল আদায় চালুর সম্ভাবনা নেই।’’
সেচ দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সেতুর টোল সাধারণত পূর্ত দফতর আদায় করে থাকে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বড়জোড়ার সংস্থাটির কাগজপত্রে গরমিল ধরা পড়ায় তা স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া ব্যারাজে টোল আদায় করতে গিয়ে যানজট হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেচ দফতর নয়, এখন থেকে পূর্ত দফতর দুর্গাপুর ব্যারাজে টোল আদায় করবে। ব্যারাজ থেকে এক কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ার দিকে পূর্ত দফতর নিজেদের টোল প্লাজা গড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy