Advertisement
E-Paper

বিপ্লবের মৃত্যুর খবরে ফিরল পরেশের স্মৃতি

দুর্গাপুরের পর্বতপ্রেমীরা জানান, তাঁদের সঙ্গে বিপ্লববাবুর যোগাযোগ ছিল আগে থেকেই। তবে তা আরও নিবিড় হয় গত কয়েক মাসে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মী বিপ্লববাবু মাস কয়েক আগে দুর্গাপুরে বদলি হয়ে আসেন।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:০৪
পর্বতারোহণে দুর্গাপুরের পরেশচন্দ্র নাথ। ফাইল চিত্র

পর্বতারোহণে দুর্গাপুরের পরেশচন্দ্র নাথ। ফাইল চিত্র

তিন বছরের মাথায় আবার ফিরে এল সেই শোকের স্মৃতি। ২০১৬ সালের মে মাসে খবর এসেছিল, এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন শহরের বাসিন্দা পরেশচন্দ্র নাথ। বৃহস্পতিবার খবর এসেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই বাঙালি পর্বতারোহী কুন্তল কাঁড়ার ও বিপ্লব বৈদ্যের। বিপ্লবের সঙ্গে যোগ রয়েছে দুর্গাপুরের। সম্প্রতি কর্মসূত্রে তিনি থাকতেন এই শহরেই। তাই এই দুঃসংবাদ পাওয়ার পরে শোকাচ্ছান্ন শহরের পর্বতপ্রেমীরা।

দুর্গাপুরের পর্বতপ্রেমীরা জানান, তাঁদের সঙ্গে বিপ্লববাবুর যোগাযোগ ছিল আগে থেকেই। তবে তা আরও নিবিড় হয় গত কয়েক মাসে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মী বিপ্লববাবু মাস কয়েক আগে দুর্গাপুরে বদলি হয়ে আসেন। সেল কো-অপারেটিভ এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। ‘দুর্গাপুর মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে সাগরময় চৌধুরী বলেন, ‘‘পর্বত সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে অগ্রণী ছিলেন বিপ্লব। দক্ষ পর্বতারোহী ছিলেন। আমাদের সংগঠনের সঙ্গে বহু দিনের যোগাযোগ। আমরা আমাদের ঘরের ছেলেকে হারালাম।’’

পরেশবাবুর স্ত্রী সবিতাদেবী শুক্রবার বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু ওঁদের তো এটাই নেশা। বিপ্লববাবুর কথা আগেই শুনেছিলাম। তাই বেশি খারাপ লাগছে। স্বামীর কথাও মনে পড়ছে।’’ এই ঘটনার পরে শহরেও নানা চর্চায় ফিরে আসছে পরেশবাবুর স্মৃতি। মাত্র বারো বছর বয়সে দীপাবলির বাজি ফাটাতে গিয়ে উড়ে গিয়েছিল তাঁর বাঁ হাতের কব্জি থেকে বাকি অংশ। আর্থিক সঙ্গতি তেমন না থাকলেও পেশায় দর্জি পরেশবাবু বারবার বেরিয়ে পড়েছেন অভিযানে। ১৯৯১ সালে হিমাচল প্রদেশের সিটিধর (৫,২৯৪ মিটার) শৃঙ্গে আরোহণ করেন। ১৯৯৩-এ ওঠেন গাড়োয়াল হিমালয়ের ঠালু (৬,০০০ মিটার) ও কোটেশ্বরে (৬,০৩৫ মিটার)। পরে গঙ্গোত্রী-২ (৬৫৯০ মিটার), চন্দ্র প্রভাত (৬৭২৮ মিটার), কেদার ডোম (৬৮৩০ মিটার) শৃঙ্গ জয় করেন। সব মিলিয়ে ৭ হাজার মিটারের কম উচ্চতা বিশিষ্ট হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গে তিনি প্রায় তিরিশ বার অভিযানে গিয়েছিলেন।

২০১৪ ও ২০১৫ সালে এভারেস্ট অভিযানে যান পরেশবাবু। কিন্তু প্রথম বার ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দ্বিতীয় বার নেপালে ভূমিকম্পের জন্য ফিরে আসতে হয়। ২০১৬ সালে ফের বেরিয়ে পড়েন বছর আটান্নর পরেশবাবু। কিন্তু আর ফেরেননি। এক বছর ধরে তাঁর দেহ রয়ে গিয়েছিল প্রায় আট হাজার মিটার উঁচুতে, সাউথ কলে। ২০১৭ সালের জুনে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দুর্গাপুরে নিয়ে আসা হয় তাঁর কফিনবন্দি দেহ।

পরেশবাবুর পর্বতারোহণের জেদ বরাবরই চর্চার বিষয় দুর্গাপুরের পর্বতপ্রেমীদের কাছে। তাঁদের মতে, শারীরিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শুধু মনের জেরে যে ভাবে তিনি একের পর এক শৃঙ্গ জয় করেছেন, তা যে কোনও পর্বতপ্রেমীর কাছে দৃষ্টান্ত ও আদর্শ হয়ে থাকতে পারে। সাগরময়বাবু জানান, ২১ মে পরেশবাবুর মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে তাঁর স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া ছেলের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

Mount Everest Mountaineer Kangchenjunga Kuntal Karar Biplab Baidya Paresh Chandra Nath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy