Advertisement
E-Paper

মেয়েদের কী হবে, প্রশ্ন পড়শিদের

বছর দশেক আগে স্ত্রী ছেড়ে গিয়েছেন। এক মেয়ের বিয়ের পরে বাবার সঙ্গেই থাকত দু’বোন। এ দিন ঘটনার পরে  প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, এক দল মানুষের ক্ষোভ-রাগের ফল ভুগতে হচ্ছে মেয়েদের। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:০৮
বাবাকে হারিয়ে দুই বোন লক্ষ্মী ও সোমা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

বাবাকে হারিয়ে দুই বোন লক্ষ্মী ও সোমা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

এক জন প্রশ্ন করছেন, ‘কী হয়েছে দাদা? মারল কে?’ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে থাকা ব্যক্তির উত্তর, ‘জল দিন, জল...। বহু লোকে মেরেছে।’ শুকনো ঠোঁট, রক্তমাখা গায়ে তাঁর অভিযোগ, ‘আমার জমিতে একশো দিনের প্রকল্পে জোর করে কাজ করাচ্ছিল ওরা। উকিলের কাছে মামলা চলছে। পাঁচ-সাত বছর আগের ঘটনা।’ ফের প্রশ্ন, ‘মারল কারা, কার নেতৃত্বে?’ জবাব, ‘টিএমসি পার্টির লোকেরা মেরেছে। ওদের নেতা...’ আর কথা বলতে পারেননি তিনি। শুধু আকুতি, ‘জল দিন জল..’।
শনিবার কালনার পিন্ডিরা পঞ্চায়েতের পাথরঘাটা গ্রামে একশো দিনের কাজে কথা কাটাকাটি, এক তৃণমূল নেতার গায়ে আঘাতের জেরে গণপিটুনিতে মারা যান মৃৎশিল্পী রবিন পাল। তার পরেই আহত রবিন পালের সঙ্গে উপরের কথোপকথনের ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে হাসপাতালেই মারা যান তিনি। বছর দশেক আগে স্ত্রী ছেড়ে গিয়েছেন। এক মেয়ের বিয়ের পরে বাবার সঙ্গেই থাকত দু’বোন। এ দিন ঘটনার পরে প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, এক দল মানুষের ক্ষোভ-রাগের ফল ভুগতে হচ্ছে মেয়েদের।
এ দিন যে রাস্তার ধারে কাঁচা নালা তৈরির কাজ হচ্ছিল, তার পাশেই রবিনবাবুর কারখানা। বাড়িও কাছেই। একতলা বাড়ির একটা ঘরে দুই মেয়ে সোমা ও লক্ষ্মীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। অভিযোগ, যে জমিতে কাজ হচ্ছিল, তা নিয়ে আপত্তি জানান তিনি। তর্কাতর্কির সময়ে হাতে থাকা হাঁসুয়ার কোপে আহত হন তৃণমূলের স্থানীয় সহকারী বুথ সভাপতি বাদল পাত্র। তাঁর গায়ে রক্ত দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অন্যেরা। অভিযোগ, পাল্টা লাঠি, কাঠ দিয়ে মারধর করা হয় রবিনবাবুকে। ওই অবস্থায় স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে রেখে দেওয়া হয়। মেয়েকে জল দিতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মারা যান তিনি।
নিহতের ভাই দানু পালও ওই নালার কাজ করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দাদা কাজ করছিল। তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জোর করে দাদার জায়গায় ঢুকে গাছ কাটতে যায়। বাধা দিলে বাঁশ, চেন দিয়ে মারধর শুরু করে। ভাইঝি অর্ধন্মৃত দাদাকে জল দিতে গেলেও দিতে দেয়নি।’’
পরিজনেরা জানান, গত বছর মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর পড়েনি সোমা। লক্ষ্মী স্থানীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ওদের কে দেখবে, প্রশ্ন তাঁদের। দানুবাবু বলেন, ‘‘ভাইঝিদের দাদাই দেখত। আমার তেমন আয় নয়। ওদের কী হবে, ভাবতে পারছি না।’’ এক আত্মীয় অনন্ত পাল বলেন, ‘‘নিষ্ঠুর ভাবে এক দল লোক রবিনকে খুন করল। নাবালিকা দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ যে কী হবে আমরা ভাবতে পারছি না। যারা খুন করছে, তাদের শাস্তি হোক।’’

Bardhaman TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy