১৯৬৫-২০২৪।
এই সময়ের মধ্যে জল গড়িয়েছে অনেকদূর। পরিদর্শন থেকে চিঠিচাপাটি সবই হয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) খুলবে কিনা, এখনও তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি।
এমএএমসি কারখানা বন্ধ হয়েছে প্রায় ২৩ বছর আগে। কারখানা খোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ২০১০ সালে। তার পরে কেটে গিয়েছে ১৫ বছর। কারখানার ‘ভোঁ’ কবে আবার বাজবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলছে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপ।
মূলত খনির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কারখানা এমএএমসি চালু হয় ১৯৬৫ সালে। নানা কারণে রুগ্ণ হয়ে যাওয়ায় ১৯৯২ সালে কারখানাটি চলে যায় ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর)-এর অধীনে। তবে, ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি কারখানায় ঝাঁপ পড়ে যায়। ফের কারখানা চালু করার জন্য ২০০৭ সালের ১ জুন তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল), ‘কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (সিআইএল) ও ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’ (ডিভিসি) কনসোর্টিয়াম গড়ে তোলে। তাদের শেয়ার যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ, ২৬ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ।
কলকাতা হাই কোর্টের নিলামে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা দাম দিয়ে ওই কনসোর্টিয়াম এমএএমসি হাতে পায়। কারখানার নতুন নাম দেওয়া হয় ‘এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড’ (এমএএমসিআইএল)। কনসোর্টিয়াম থেকে জানানো হয়, কারখানায় খনি সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ উৎপাদন করবে বিইএমএল। উৎপাদিত পণ্য কিনে নেবে সিআইএল। সিআইএলের কাছ থেকে কয়লা তুলবে ডিভিসি। কারখানা চালু করার জন্য তিনটি সংস্থা মিলে একটি টাস্ক ফোর্স গড়ে তোলে।
জানা গিয়েছে, তার পর থেকে মাঝে মাঝে কনসোর্টিয়াম কারখানা পরিদর্শনে এসেছে। তবে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষবার কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিরা কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন। তার পরে আর কেউ আসেননি। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিইএমএল বাকি দুই সংস্থাকে জানায়, কারখানায় তারা ‘লং ওয়াল মাইনিং’, ‘কনটিনিউয়াস মাইনর্স’, ‘সারফেস মাইনর্স’ যন্ত্রপাতি তৈরি করার কথা চিন্তাভাবনা করছে। ২০২১ সালের ১৯ মে কনসোর্টিয়ামের অন্তর্বতী বোর্ড মিটিংয়ে এমএএমসি কারখানায় উৎপাদন চালুর সম্ভাবনা ও বাস্তবতার দিকটি দেখার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২৪ সালের ২০ অগস্ট বিইএমএল জানায়, কারখানা খোলার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সিআইএল ও ডিভিসি-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তার পরে কী হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে জানা গিয়েছে, কারখানা ও কয়লা শিল্পে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশ হবে— এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন আইএনটিইউসি প্রভাবিত ‘হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক অসীম চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এমএএমসি কারখানা খোলার বিষয়ে নতুন তথ্য পাওয়া যায়নি।”
বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ জানান, ২০২৪ সালের ৬ অগস্ট তিনি শিল্পাঞ্চলের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা খোলার দাবি তোলেন সংসদে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই বিক্রি করে দিচ্ছে। সেখানে বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে তাদের কী মনোভাব সহজেই বোঝা যায়।” যদিও, বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা খোলার বিষয়ে রাজ্য সরকারের উৎসাহ ও সহযোগিতা দরকার। কিন্তু এ রাজ্যের সরকারের তরফে শিল্প নিয়ে কোনও উৎসাহ নেই।”
এই পরিস্থিতির মধ্যে চর্চায় উঠে আসছে কারখানার আবাসনগুলি।
(চলবে)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)