Advertisement
E-Paper

বিক্ষোভ চলছেই, ফলে বিভ্রাট মানলেন উপাচার্য

পার্ট ২-এর ফল বেরোনোর মাসখানেক পরে অবশেষে মার্কশিটে গণ্ডগোলের কথা মেনে নিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। মঙ্গলবার এসআফআইয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী বর্ধমান শহরে মিছিল করে। মিছিল শেষে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিতে গেলে তাঁদের সামনেই উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার কবুল করেন, “অনেকে মাত্র পাঁচ নম্বর পেয়ে পাশ করে গিয়েছেন। এই ভুল আমাদের যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলেছে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০০
কাটোয়ায় হোক প্রতিবাদের মিছিল।

কাটোয়ায় হোক প্রতিবাদের মিছিল।

পার্ট ২-এর ফল বেরোনোর মাসখানেক পরে অবশেষে মার্কশিটে গণ্ডগোলের কথা মেনে নিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

মঙ্গলবার এসআফআইয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী বর্ধমান শহরে মিছিল করে। মিছিল শেষে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিতে গেলে তাঁদের সামনেই উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার কবুল করেন, “অনেকে মাত্র পাঁচ নম্বর পেয়ে পাশ করে গিয়েছেন। এই ভুল আমাদের যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলেছে।”

ফল বেরেনোর পর থেকেই দেরিতে ফলপ্রকাশ, ফলাফলে অজস্র ভুল, মার্কশিটে গোলমাল ইত্যাদি অভিযোগে মিছিল, বিক্ষোভ, অবরোধ করছিলেন পড়ুয়ারা। তাতে ভিন জেলার তো বটেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু পড়ুয়াও যোগ দেন। মঙ্গলবারও একদিকে বর্ধমান শহরে বড় মিছিল করে এসএফআই। আবার কাটোয়াতেও হোক প্রতিবাদের ব্যানারে মিছিল করেন পড়ুয়ারা। সেখানে যোগ দেন যাদবপুর, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন। দু’তরফই স্মারকলিপি দেন কর্তৃপক্ষকে।

এ দিন অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিটে নজিরবিহীন ত্রুটি ও প্রশাসনির অরাজকতার প্রতিবাদে এসএফআইয়ের বর্ধমান জেলা কমিটির তরফে মিছিল করা হয়। দুপুরে বর্ধমান রেল স্টেশনে জড়ো হন এ জেলা তো বটেই, ভিন জেলারও প্রায় শ’তিনেক পড়ুয়া। বিসি রোড হয়ে মিছিলটি রাজবাটির দিকে যায়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়। বেশ কিছুক্ষন শ্লোগান ও বচসার পরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। মিছিল থেকে প্রশ্ন ওঠে, টিএমসিপির ছাত্রদের ভেতরে ঢুকতে দিয়ে তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? পরে পুলিশ এসএফআইয়ের পাঁচ জন প্রতিনিধিকে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে অনুমতি দেয়। ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মধুজা সেনরায়। তাঁর দাবি, ‘‘কেউ পাঁচ নম্বর পেয়ে পাশ করে যাচ্ছে, কেউ ৬৯ পেয়েও ফেল। আগে ৪০ দিনেও পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখন দীর্ঘ আট মাস পরেও ফল প্রকাশিত হচ্ছে না। এমনকী হলেও তাতে প্রচুর ভুল থাকছে।’’ তাঁর আরও অভিয়োগ, ‘‘বিএ পার্ট ২-র মার্কশিট এখনও হাতে পাননি পরীক্ষার্থীরা। এর জবাব দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে।’’ এসএফআইয়ের আরও অভিযোগ, হাটগোবিন্দপুরের এক ছাত্রী রিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স রয়েছে। পাসের বিষয় বাংলা আর সংস্কৃত। কিন্তু সংস্কৃতের বদলে তিনি নম্বর পেয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। বর্ধমানের মহিলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সের ছাত্রী স্বাতী মিত্রের অভিযোগ, “পার্ট ১ পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যার একটি বিষয়ে শতকরা ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম। পার্ট ২-তে তা নেমেছে ৪২-এ। এ দিকে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় ৬৬ পেয়েছি। যা অস্বাভাবিক।” বিবাকানন্দ কলেজের পাসের ছাত্র শুভাশিস দাসও বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইতিহাসে প্রতি প্রশ্নের প্রায় দশ পাতা উত্তর লিখে আমি যে শূন্য পাব, ভাবতেই পারছিনা।’’

উপাচার্য অবশ্য বলেন, “পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় আমি দেখি না। ওই দফতরে পাঁচ জন আধিকারিক রয়েছেন। কেন পরীক্ষার খাতা পরীক্ষা বিভাগে পড়ে রইল, কেন এত ভুল হয়েছে, কেনই বা ফল প্রকাশে দেরি এ সব জানতে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। ওই কমিটি ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। তারপর ১১ মে থেকে পার্ট ৩ পরীক্ষা শুরু হবে।” যদিও কবে পার্ট ৩ পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ হবে, কবে রিভিউয়ের ফল প্রকাশ হবে, তা নিয়ে পড়ুয়াদের আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে।

উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন এসএফআইয়ের প্রতিনিধিরা।

কাটোয়াতেও ফলে বিভ্রাট নিয়ে হোক প্রতিবাদের ব্যানারে বিক্ষোভ দেখান এক দল পড়ুয়া। কাটোয়া কলেজ খেরে পুরসভা মোড় পর্যন্ত গিয়ে ফের কলেজে ফিরে আসে মিছিলটি। পা মেলান যাদবপুর, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে পার্ট ২ পরীক্ষায় প্রকাশিত ত্রুটিপূর্ণ ফলের পুনর্বিবেচনা, বিনামূল্যে দ্রুত ‘স্পট রিভিউ’ এবং আসন্ন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার সঠিক ও দ্রুত ফল প্রকাশ করতে হবে। পরে কাটোয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। বর্ধমানে বেশ কিছু দিন ধরেই হোক কলরবের ঢঙে হোক প্রতিবাদ নামে বিক্ষোভ চলছিল। লিফলেট বিলি করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। পরে অবশ্য রাতে তাদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ দিন কাটোয়ার মিছিল করে পড়ুয়ারা অভিযোগ করেন, যার যেমন লটারি লেগেছে, সে তেমন নম্বর পেয়েছে। কেউ কেউ তো ২০০তে ২০২ নম্বরও পেয়েছে। অসমাপ্ত রেজাল্টের সংখ্যা অগুনতি। মিছিল থেকে প্রচারপত্রও বিলি করেন তাঁরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে লেখা আছে, ‘মানুষ হলে মানবিকতা থাকলে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’ আন্দোলনকারীদের তরফে বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুপর্ণ পাল, তৃতীয় বর্ষের শুভাশিষ সিংহ বলেন, “পরীক্ষার ফল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কলেজেই ‘হোক প্রতিবাদ’ হবে। আগামী বৃহস্পতিবার আমরা আবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমা হব।” তাঁদের আরও দাবি, “আমরা চাই প্রতিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করুক। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ রকম ভাবে পড়ুয়াদের সঙ্গে ছিনিমিনি না খেলেন।” কাটোয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্যবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ই নেবে।’’

এই আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপকথা ঘোষ কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, “কাটোয়া কলেজের পড়ুয়ারা আমাদের ডেকেছেন। তাই সামিল হয়েছি।”

মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

burdwan university vice chancellor smritikumar sarkar bu student protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy