E-Paper

১৭ জনকে আটকে লুট, কাটছে না আতঙ্ক

মোটরবাইকে পালানোর সময় পিছু ধাওয়া করে পুলিশ। দ্রুত গতিতে পালানো, ক্রমাগত রাস্তা বদলানোর মাঝে দু’জায়গায় বোমাবাজিও করে দুষ্কৃতীরা।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য , সুশান্ত সরকার 

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৩
ডাকাতির পরে ভাঙা আলমারি।

ডাকাতির পরে ভাঙা আলমারি। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।

তখনও তেমন রাত হয়নি। ঘড়ির কাঁটা ৮টা পেরিয়েছে। ঘরে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে মন দিয়ে স্ত্রী, মেয়ে, নাতনির সঙ্গে সিরিয়াল দেখছিলেন সুভাষ ধর। হঠাৎ প্রতিবেশী এক দম্পতির গলায় কাটারি ধরে হুড়মুড়িয়ে সেই ঘরে ঢুকে পড়ে চার জন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু করে দেয় লুটপাট। মিনিট কুড়ির মধ্যে বাঁচাতে আসা সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ বাড়ির ১৭ জনকে আটকে রেখে শাবল দিয়ে আলমারি ভেঙে নগদ টাকা, গয়নাগাঁটি দিয়ে চম্পট দেয় তারা।

এখানেই শেষ নয়। মোটরবাইকে পালানোর সময় পিছু ধাওয়া করে পুলিশ। দ্রুত গতিতে পালানো, ক্রমাগত রাস্তা বদলানোর মাঝে দু’জায়গায় বোমাবাজিও করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি কারখানার সামনে গাড়ি রেখে তাদের আটকানোর চেষ্টা হয়। শেষে হুগলির ত্রিবেণীর দিকে পালায় তারা। পুলিশ সেখান থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে। ধৃত কৃষ্ণপদ মণ্ডল ও অলোক বিশ্বাস নদিয়ার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি বাইক, একটি বন্দুক, তিন রাউন্ড গুলি। তাদের বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান বিচারক।

বুধবার রাতের রোমহর্ষক ঘটনার আতঙ্ক কাটছে না কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের হিজুলি গ্রামে। এলাকাবাসীর দাবি, সন্ধ্যার সময় বাড়িতে টিভি চলছে, দশ-বারো জন লোক রয়েছে তার পরেও অবলীলায় দুষ্কর্ম চালাল দুষ্কৃতীরা। সিভিক ভলান্টিয়ার পৌঁছেও কিছু করতে পারেনি। এরকম হলে নিরাপত্তা কোথায়, প্রাণের ভরসায় বা কি, প্রশ্ন তাঁদের।

হিজুলী গ্রামের পাকা রাস্তা ঘেঁষে ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে সপরিবার থাকেন চার ভাইবোন সুনীল ধর, গোপাল ধর, রানু ধর ও সুভাষ ধর। আশপাশে খুব বেশি বসতি নেই। কিছুটা এগিয়ে গেলে দু’পাশে চাষের জমি। শীতল পাটি বিক্রেতা সুভাষ বলেন, ‘‘সদর দরজা খোলাই ছিল। পড়শি চেনা মণ্ডল ও মিনু মণ্ডলের গলায় কাটারি ধরে চার দুষ্কৃতী ঢোকে। আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা দেখিয়ে, নাতনিকে মারার হুমকি দিয়ে লুটপাট শুরু করে। প্রাণভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি।’’ সুভাষবাবুর স্ত্রী, মেয়ের হার, আংটি ছিনিয়ে নেয়। বাড়ির অন্যদের ভয় দেখিয়ে একটা ঘরে জড়ো করা হয়। ৮টা ৩৫ নাগাদ পালায় তারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পাকা রাস্তার ধারেই বাইক রেখেছিল ডাকাতেরা। মুখ ঢাকা, হাতে অস্ত্র ছিল। বাড়িরই এক জন দোতলার অন্ধকারে লুকিয়ে ফোন করে সিভিক ভলান্টিয়ারকে খবর দেন। একজন সিভিক ভলান্টিয়ার এসে পৌঁছলে তাঁকেও অস্ত্র দেখিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে মাথা হেঁট করে বসিয়ে রাখা হয়। সুফল মালিক নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘সকলেরই ফোন নিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। পরে বাড়ির পাশে ফোনগুলি ফেলে পালায়।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাড়ি থেকে বেরিয়েই বাইক নিয়ে পাথরঘাটা-কালনা রোড হয়ে কিলোমিটার খানেক দূরে কুশোডাঙা মোড়ে পৌঁছয় ডাকাতেরা। সেখান থেকে কালনা-পাণ্ডুয়া রোড হয়ে আরও কিলোমিটার খানেক দূরে কল্যাণপুর মোড় থেকে অসম লিঙ্ক রোড ধরে হুগলির বলাগড়ে ঢুকে যায়। ততক্ষণে তাদের পিছু নিয়েছে পুলিশ। লিঙ্ক দিয়ে রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে পূর্ব সাহাপুর এলাকায় বোমাবাজি
করে দুষ্কৃতীরা।

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যর প্রবীর দে-র দাবি, ‘‘দুটি বোমা ফাটায় দুষ্কৃতীরা। একটি কারখানার সামনের রাস্তায় গাড়ি রেখে ওদের আটকানোর চেষ্টা হলেও ফাঁক গলে পালিয়ে যায়।’’ এর পরে এসটিকেকে রোডে উঠে দুষ্কৃতীরা হুগলির ত্রিবেণীর দিকে যায়। পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি গ্রামীণ পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। ডাকাত দলটি ঢুকে পড়ে পোলবায়। সেখানে ধরপাকড় শুরু হতেই মগরার কালীতলা সেতুর কাছে পুলিশের গাড়ি দেখতে পেয়ে বোমা ছোড়ে ডাকাত দল। দু’জন পালালেও বাকি দু’জন ধরা পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে যান হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalna

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy