Advertisement
E-Paper

উঠোন ফুঁড়ে আগুনের ভয় নিয়েই বাস

মাটিতে ফাটলের শব্দ এখন গা সওয়া। অপেক্ষা যেন ধীরে-ধীরে ভিটে, রাস্তা, মাঠের তলিয়ে যাওয়ার।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাটিতে ফাটলের শব্দ এখন গা সওয়া। অপেক্ষা যেন ধীরে-ধীরে ভিটে, রাস্তা, মাঠের তলিয়ে যাওয়ার। যেমনটা ঘটে আসছে প্রায় এক দশক ধরে। এমন বিপদের সঙ্গেই বাস কুলটির সাঁকতোড়িয়ার শিশুবাগানে।

২০১৩-র ২৭ নভেম্বর বাড়ির উঠোনেই ধসের জেরে তলিয়ে যান হেনা পারভিন। তার পরে দিন কয়েক আগে ফের এক জনের বাড়ির উঠোনে ধসের জেরে গর্ত তৈরি হয়। বারবার কেন এমনটা ঘটছে? ইসিএল সূত্রে জানা যায়, প্রায় একশো বছর আগে এলাকায় কয়লা তুলেছিল ‘বেঙ্গল কোল কোম্পানি’। কিন্তু নিয়ম মেনে শূন্যস্থান ভরাট করা হয়নি। তার পরে থেকেই কার্যত ফাঁপা মাটির তলা। কিছু এলাকায় ভূগর্ভে কয়লার স্তরে আগুনও জ্বলছে। শিশুবাগান ভিলেজ কমিটির সম্পাদক মঞ্জুর আলমের কথায়, ‘‘মাঝে-মাঝেই মাটি ফুঁড়ে আগুন ও ধোঁয়া বেরোয়। সেই সঙ্গে কটূ গন্ধ। সবাই সব জানেন। কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই। বিপদের মধ্যেই জীবন কাটছে।’’

বিপদ প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছেন এলাকার সকলেই। বাড়ির উঠোনে পড়াশোনা করছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সানা খাতুন। উঠোনের এক পাশে মাকড়সার জালের মতো ফাটল দেখিয়ে সে বলে, ‘‘ও দিকে তাকালেই খুব ভয় হয়। মনে হয় এই বুঝি ধস নেমে মাটিতে তলিয়ে গেলাম।’’ নাসিরুদ্দিন খান নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাতে দু’চোখের পাতা এক হয় না। হয়তো কোনও দিন পাতাল থেকে দেহ তুলতে হবে।’’ প্রায় একশো-বছরের আগের সেই ভুলের মাশুল এখনও কেন দিতে হচ্ছে, প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। মঞ্জুর আলমের বলেন, ‘‘আমরা বারবার পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু ইসিএল বা জেলা প্রশাসন, কেউই গা করে না।’’

কোথায় আটকে রয়েছে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া, প্রশ্ন রয়েছে সে নিয়েও। স্থানীয় জানা গিয়েছে, ২০০৯-এ প্রথম এই এলাকাকে ধসপ্রবণ বলে জানায় ইসিএল। বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিতে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক অর্থ মঞ্জুরও করেছে। ইসিএল জানিয়েছে, এলাকাটি সংস্থার নিজস্ব। বসবাস যাঁরা করেন, তাঁরা সকলেই জবরদখলকারী। তবু তাঁদের পুনর্বাসন বাবদ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ধসপ্রবণ হিসেবে ঘোষণার পরেই এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ‘সাঁকতোড়িয়া ভিলেজ কমিটি’। সংগঠনের সম্পাদক বিমান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু পুনর্বাসনের কাজ এক চুলও এগোয়নি।’’

জানা গিয়েছে, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এলাকায় ‘ডেমোগ্রাফিক সার্ভে’ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে পরিচয়পত্রও। কাজ চলছে পুনর্বাসনের, দাবি এডিডিএ-র কর্তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের বাড়ি তৈরির কাজ করছে রাজ্যের আবাসন দফতর। এই কাজটি দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিডিএ-র অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক সৌম্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হলেই ক্ষতিগ্রস্তদের সরানো হবে।’’

তত দিনে আর কোনও উঠোনে মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরিয়ে আসবে কি না, সে আশঙ্কা নিয়েই বাস করতে হবে বাসিন্দাদের।

Kulti কুলটি Coal mine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy