তাঁত বুনতে ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র।
এক সময় গ্রামে পা দিলেই ‘ঠক্ঠক্...’ শব্দটা ভেসে আসত। রঙিন সুতো আর কাপড় মেলা থাকত প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠোনে।— এখন এ সবই অতীত। সিল্ক আর ফ্যান্সি শাড়ির দাপটে বাজার হারিয়েছে তাঁতের শাড়ি। মুখ থুবড়ে পড়েছে কাটোয়ার ঘোড়ানাশ-মুস্থূলী গ্রামের তাঁত শিল্প। অনেকেই ছেড়েছেন পুরনো পেশাও।
বাসিন্দারা জানান, গ্রামের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের পেশা তাঁত বোনা। বছর পাঁচেক আগেও পুজোর মরসুমে চোখের পাতা এক হতো না গ্রামের শিল্পীদের। ঝড় উঠত হ্যান্ডলুম আর চরকায়। কিন্তু এখন সে সবে ধুলো জমছে। উপার্জনও কমেছে আগের তুলনায়। ফলে নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগটাই এখন বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছেড়ে অন্য কাজ খুঁজে নিয়েছেন।
শিল্পের এমন হাল কেন? তাঁতশিল্পী নিতাই ঘোষ, মিলন ঘোষেরা জানান, কাপড় বোনার জন্য শিল্পীরা মজুরি পাচ্ছেন না তেমন। বাড়ছে সুতোর দামও। এই সুযোগে বেড়েছে মহাজন-রাজও। মহাজনদের কাছ থেকে ৫৫টাকা প্রতি মোড়া দরে সুতো কিনতে হয়। তা ছাড়াও মাকু, সানা, বোয়া, নলীর মতো কাঁচামাল এবং তাঁতযন্ত্র কিনতেও ভরসা সেই মহাজনেরাই। শিল্পীদের আক্ষেপ, ‘এখন তো নকশাও করে দেন মহাজনেরাই।’ সন্দীপ ঘোষ, মথুর মাঝিরা জানান, খুব ভাল শিল্পী হলেও হস্তচালিত তাঁতে একটি শাড়ি বুনতে গোটা দিন লেগে যায়। এরপরে শাড়ি প্রতি তাঁতিরা পান মাত্র ১৮০ টাকা করে। এ ছাড়া পাইকারি দোকানদারেরা কম দামে তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ি কিনে বিক্রি করছেন। এর সঙ্গে ফ্যান্সি শাড়ি, ওড়নার চাহিদা বেড়েছে পুজোর সময়ে। সব মিলিয়ে তাঁতিদের গ্রামে লাভের মুখ প্রায় কেউই দেখেন না বলে জানান নিতাই নন্দী, গঙ্গারাম মাঝিরা। তাঁরা জানান, এখন ৪-৫ হাত ওড়না বুনে দৈনিক ৪০০টাকা মজুরি মিলছে। লোকসান কম হবে, ভেবে অনেকে শুধু ওড়নাই বুনছেন এখন।
মাস খানেক আগে ‘তাঁতসাথী প্রকল্পে’ কাটোয়ার ঘোষহাট সমবায় তাঁত সমিতি গ্রামের একশো জন তাঁতিকে হস্তচালিত যন্ত্র তুলে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও ‘শুধু যন্ত্রে কী আর ভাত জোটে’ বলে আক্ষেপ করছেন তাঁতিরা। কাটোয়া ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে বিদ্যুৎ নন্দীর কথায়, ‘‘পাওয়ারলুমে শাড়ি বুনতে খরচ কম। তাই ওই শাড়িই সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু শাড়ি তবে উত্তরপ্রদেশ, চেন্নাইয়ে রফতানি করা হয়।’’
ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের আশ্বাস, ‘‘তাঁত বাজারজাত করার জন্য সরকারের কাছে তাঁতিরা প্রস্তাব দিন। সরকার ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy