পরীক্ষকদের হাতে পৌঁছনোর বদলে পাঁচ মাস ধরে খাতা পড়ে ছিল পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করল ওয়েবকুটা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ, বিএসসি ও বিকম পার্ট ২ এর ফল প্রকাশিত হয়। একেই প্রায় ন’মাস পরে ফল বেরোনোয় ক্ষোভ জমেছিল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে, তার উপর নম্বরে, নামে, মার্কশিটে অজস্র ভুল থাকায় তা চরমে ওঠে। বিক্ষোভ, অবস্থানও হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, যে সংস্থাকে মার্কশিট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা বিশ কিছু ভুল করেছে। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষক দেরিতে খাতা জমা দেওয়াতেও সমস্যা হয়েছে। এই মন্তব্যকেই শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে দুর্ভাগ্যজনক বলে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বা ওয়েবকুটার বর্ধমান জেলা কমিটি।
শনিবারের বৈঠকে ওই সংগঠনের জেলা সম্পাদক মুন্সি আজিম্বর রহমান বলেন, ‘‘সাধারণত পরীক্ষার খাতা পরীক্ষা শেষ হওয়ার দু’মাসের মধ্যে সমস্ত পরীক্ষকদের কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিএ, বিএসসি, বিকম পার্ট ২-এর খাতা পাঁচ মাস পড়ে ছিল পরীক্ষা নিয়ামক দফতরে। আমরা জানুয়ারির পরে খাতা পেয়েছি। এর মধ্যে আর কত তাড়াতাড়ি পরীক্ষকেরা খাতা দেখে জমা দিতে পারেন? আমরা দু’মাসের মধ্যে খাতা দেখে জমা দিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘উত্তরপত্র বন্টনের দেরির জন্যই পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে।” ওই সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক দেবনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, “আগে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য যে কর্মীরা কাজ করতেন সেই সমস্ত অভিজ্ঞ কর্মীদের সরিয়ে দিয়ে নতুন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই আজ এই অবস্থা।’’ দেবনারায়ণবাবুর দাবি, ‘‘পরীক্ষা বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা বা মনিটরিং করার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে ওই সংস্থার। এর দায় কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাই সব মিলিয়ে নানা গোলযোগ দেখা দিয়েছে।”
ওয়েবকুটার আরও অভিযোগ, প্রতি বছর অগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টিকেই খাতা দেখার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখেন পরীক্ষকেরা। এ বারও বেশিরভাগ পরীক্ষকই সেই সময়টিকে হাতে রেখেছিলেন। নিজেদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও তাঁদের অনেকেই খাতা দেখার জন্য স্থগিত রেখেছিলেন। কিন্তু নভেম্বর বা ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও খাতা দেখা সংক্রান্ত যে চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ার কথা, সেই চিঠি আসেনি। এমনকী খাতা পাঠাতে দেরি হবে, সেই মর্মেও কোনও খবর দেওয়া হয়নি পরীক্ষকদের। ওই সংগঠনের এক সদস্য গৌতম সরকারের দাবি, ‘‘এর ফলে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে খাতা দেখতে হয়েছে। কেন পাঁচ মাস ধরে উত্তরপত্রগুলি পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরে পড়ে রইল, তাও আমাদের জানানো হয়নি।”
তবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দীপক কুমার সোমের দাবি, “আমি অক্টোবরের শেষের দিকে ওই পদে যোগ দিয়েছি। তারপর খাতা বিলি করা শুরু হয়েছিল।’’ তিনি বলেন, ‘‘আসলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ামক পদে স্থায়ী কেউ ছিলেন না। তাতেই গোলমাল দেখা দিয়েছে। পরীক্ষার খাতাগুলি বোধহয় আমি আসার অপেক্ষাতেই ফেলে রাখা হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy