২০২১-এর জানুয়ারির মধ্যেই জেলার গৃহহীনদের জন্য চলতি অর্থবর্ষে ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। এই মর্মে বিডিও ও প্রশাসনের নানা স্তরের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি। অথচ, জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত দু’টি অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সে লক্ষ্যও পূরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে জেলার আটটি ব্লকে এই প্রকল্পে দশ হাজার বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তৈরি হয়েছে ৯,৭০৩টি। কিস্তির টাকা পেলেও ২৯৭ জন উপভোক্তার বাড়ি আজও তৈরি হয়নি। আবার ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ওই একই প্রকল্পের অন্তগর্ত আটটি ব্লকে ৮,১৪৮ টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সেখানে এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে ৪,৮৭৯টি বাড়ি। অর্ধসমাপ্ত ৩,২৬৯টি বাড়ি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৫,৮৫৫ টি বাড়ি। এ পর্যন্ত নথিবদ্ধ হয়েছে ৩,১৫৯ জন উপভোক্তার নাম। এ পর্যন্ত এক জন উপভোক্তারও বাড়ি যেখানে তৈরি হবে, সেই জমি চিহ্নিত হয়নি (জিও ট্যাগিং)।
এই তথ্য সামনে আসতেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরি-সহ নানা সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে এই সরকার ব্যর্থ। তার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’’ একই অভিযোগ সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীররও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সামনে ভোট। তাই এখন প্রকল্প রূপায়ণে তোড়জোড় করার কথা বলছে শাসক দল ও প্রশাসনের।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউড়িও বলেন, ‘‘যথেষ্ট উন্নয়নের কাজ হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত শেষ করা হবে।’’
প্রশাসনের দাবি, চলতি বছরে করোনা-পরিস্থিতির জন্য কাজে ‘খামতি’ থেকে গিয়েছে। কিন্তু গত দু’বছরে? জেলাশাসকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই সমস্যাটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।’’ পাশাপাশি, তিনি জানান, যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে, সেখানকার বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নভেম্বরের মধ্যেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। এ-ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদি কোনও উপভোক্তা বাড়ি বানাতে না চান, তাঁকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। পরিবর্তে প্রয়োজন রয়েছে এমন কাউকে খুঁজে বার করে বাড়ি বানিয়ে দিতে হবে।
তবে কয়েকটি ব্লকের বিডিও-রা জানান, কিছু উপভোক্তা জমির ‘জিও ট্যাগিং’ করিয়ে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন। কিন্তু জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ বা অন্য কোনও কারণে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করতে পারেননি উপভোক্তা। ফলে, গত দুই অর্থবর্ষে লক্ষ্যপূরণও অধরা থেকে গিয়েছে।