Advertisement
E-Paper

‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’-এ কি গলদ, প্রশ্ন সংক্রমণে

স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মতে, এই কাজে খামতি থাকলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, লালারসের নমুনা পরীক্ষা হবে না। তাতে ধীরে-ধীরে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৭
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সেই তালিকায় থাকছেন পুলিশ-কর্তা, চিকিৎসকেরাও। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে খুঁজে বার করার (‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’) ক্ষেত্রে খামতির ফাঁক গলেই চলতি মাসে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত কি না, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পূর্ব বর্ধমানে।

স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মতে, এই কাজে খামতি থাকলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, লালারসের নমুনা পরীক্ষা হবে না। তাতে ধীরে-ধীরে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘করোনা-আক্রান্তদের ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ করার জন্যে বিশেষ ‘সেল’ গঠন করা হয়েছে। তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খোঁজ রাখছে। নজরদারিও করছে।’’

নিয়ম অনুযায়ী, কেউ করোনা-আক্রান্ত হলে তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তাঁদের খুঁজে বার করা হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারিতে পুরসভা এলাকায় মূলত স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং পঞ্চায়েত এলাকায় আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এই কাজ করেন। এ ছাড়া, পুলিশও আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা লোকজনের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। সরাসরি সংস্পর্শে আসা লোকেদের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, উপসর্গ রয়েছে, এমন প্রাথমিক সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদেরও নমুনা সব সময় সংগ্রহ করা হচ্ছে না। উপসর্গ না থাকা মানুষজনকে নিয়মিত নজরে রাখার কথা বলা হলেও তা সব সময় হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ খুঁজে বার করার জন্য আক্রান্তের তথ্যের উপরেই অনেকটা নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তেরা ঠিকমতো তথ্য দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক-দম্পতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকেই ঠিকমতো তথ্য দিতে নারাজ ছিলেন বলে দাবি। এ নিয়ে জেলা ‘টাস্ক ফোর্স’-এর বৈঠকে উষ্মাও প্রকাশ করেন হাসপাতালের কর্তারা। জেলাশাসক বিজয় ভারতী কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অনেকের দাবি, অনেক সময়ে আক্রান্তেরা শেষ ক’দিন কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তা পুরোপুরি মনেও করতে পারছেন না। ফলে, সমস্যা থেকে যাচ্ছে। আক্রান্তের প্রাথমিক সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজ না মেলার কারণেই বলে পুলিশের পরামর্শে মেমারির দেবীপুর পঞ্চায়েত, সাতগেছিয়া এলাকা, বর্ধমান ১ ব্লকের সরাইটিকর, পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ‘লকডাউন’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।

মনোবিদ ইন্দ্রাণী দত্তের কথায়, ‘‘যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি আজ ও গতকাল কার-কার সঙ্গে দেখা করেছেন, তিনি সহজেই বলতে পারবেন। দু’দিন আগে কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা-ও হয়তো কেউ-কেউ বলতে পারবেন। কিন্তু তার আগের দিনগুলির কথা বলা সম্ভব না-ও হতে পারে।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও রোগী কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তা যত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানা যাবে, ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ তত নিখুঁত হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যা হল, শরীরে ভাইরাসটি কবে ঢুকেছে, আক্রান্তেরা তো সেটাই নিশ্চিত নন।

বর্ধমান শহরের চিকিৎসক এসকে দাস, নাট্যকার দেবেশ ঠাকুরদের মতে, ‘‘আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা লোকেদের খোঁজ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারলে ‘লকডাউন’ উঠলেই, সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।’’

coronavirus Health Covid-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy