বাড়ি থেকে বার হওয়ার আগে বা বাড়ি ফিরে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি তার জন্যও থাকে সময়। কেউ বা বাজারে গিয়ে তারই জন্য হন্যে হয়ে খোঁজেন খাবার। পোষ্য নিয়ে এমনই নানা চিত্র দেখা গিয়েছে দুর্গাপুর শহরের নানা প্রান্তে। পশুপ্রেমীদের বক্তব্য, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে এই শহরে কুকুর, পাখি এবং বিড়াল, এই তিন পোষ্য রয়েছে সুখে-শান্তিতেই। সেই সঙ্গে কলকাতায় কুকুরছানা ‘খুনে’র ঘটনায় প্রতিবাদও দানা বেঁধেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় এনআইটি লাগোয়া এলাকায় ‘দুর্গাপুর প্রয়াস জনশিক্ষা ও স্বাস্থ্য চেতনা উন্নয়ন সমিতি’ কলকাতার ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। সেই সঙ্গে নাগরিকদের একটা বড় অংশেরই দাবি, দুর্গাপুরে অবশ্য পোষ্যেরা নিরাপদেই রয়েছে।
কেমন সেই ‘নিরাপত্তা’?
সগড়ভাঙার ‘বৈশাখী’ ক্লাবের সদস্যেরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁরা পথের কুকুরদের যত্ন, কুকুরছানাদের পরিচর্যা, জখম কুকুরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এই মুহূর্তে তাঁদের তত্ত্বাবধানে প্রায় দু’শো কুকুর রয়েছে।
শুধু পথের কুকুরই নয়, বিদেশি কুকুরও পোষার চল রয়েছে এই শহরে। একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডে মোট প্রায় হাজার দুয়েক বিদেশি পোষ্য কুকুর রয়েছে। এ ছাড়াও শহরে রাস্তার কুকুরের সংখ্যা অন্তত ৪০ হাজার। সেগুলি বেঁচে রয়েছে মূলত এলাকাবাসীর ভরসাতেই। সিটি সেন্টার, বেনাচিতি, বিধাননগর প্রভৃতি এলাকায় রাতের দিকে কোনও এক জায়গায় অনেকখানি খাবার দিয়ে পাড়ার কুকুরদের ডাক দেওয়া হয়। তারা খেয়ে চেলে যায়। আবার এমন লোকজনও রয়েছেন, যাঁরা রোজ কাজ থেকে ফেরার সময়ে দোকান থেকে রুটি কিনে এনে পাড়ার কুকুরকে খাইয়ে তবে বাড়ি ঢোকেন।
শুধু কুকুর নয়, বিড়াল নিয়েও আগ্রহ রয়েছে শহরবাসীর। বাড়িতে বিড়াল পোষা তো রয়েইছে। আর তাঁদের ‘দেখা’র জন্য রয়েছেন বেনাচিতির আনাজ ব্যবসায়ী বিমল মণ্ডলদের মতো অনেকেই। তিনি বাজারে মাছের দোকান থেকে থলি ভরে কানকো নিয়ে যান, তাঁর পাড়ার চারটি বিড়ালের জন্য। রাস্তার অসুস্থ বা খেতে না পাওয়া কুকুর, বিড়ালকে ঘরে এনে রাখার ব্যবস্থা করেছেন ডিএসপি টাউনশিপের বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা চৈতালি রায়ও। একটি পরিত্যক্ত অসুস্থ ঘোড়াকেও তিনি রাখার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মোটের উপরে পশুপাখি দুর্গাপুরে নিরাপদ। তবে খুচখাচ ঘটনা ঘটে তো বটেই!’’
তেমনই একটি ঘটনার অভিযোগ উঠেছিল ২০১৬-র নভেম্বরে। একটি পরিবারের বিরুদ্ধে রাস্তার কুকুরদের প্রতি নৃশংস আচরণের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন পড়শিরা। মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) দফতরে অভিযোগও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু এমন মায়া-মমতার মাঝেও একটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে নাগরিকদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা জানান, রাস্তার কুকুরের সংখ্যাধিক্যের জেরে বিপত্তি বাড়ছে। রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ঘটনা, কামড়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। তবে এই পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন ও পুরসভা কতখানি সক্রিয়, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী।