Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Katwa

ওঁদের কাঁধে ঢাকের ভার, সংসারেরও

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার সুদপুর, আউরিয়া, বাজার বনকাপাশি গ্রামের মহিলারা জানান, শুরুতে তাঁদের ঢাক বাজানোয় ভরসা করতে পারতেন না অনেকেই। তবে ধীরে ধীরে তাঁদের ঢাকের বোল মন কাড়ে সবার।

ঢাকে বোল তুলেছেন সুদপুরের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

ঢাকে বোল তুলেছেন সুদপুরের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১৭
Share: Save:

দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান পুরুষেরা। তাতে অবশ্য নুন আর পান্তা একসঙ্গে জোটে না। পুজো পার্বণে ছেলেমেয়েদের একটা নতুন জামা বা এক দিন পেটপুরে ভালমন্দ খাওয়া তাঁদের কাছে বিলাসিতা। অবস্থা দেখে হাল ধরেন ঘরের উমারা। পুজোর মরসুম জুড়ে কাঁধে ঢাক নিয়ে সংসারের ফাঁক-ফোঁকর ভরিয়ে তুলছেন তাঁরাই।

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার সুদপুর, আউরিয়া, বাজার বনকাপাশি গ্রামের মহিলারা জানান, শুরুতে তাঁদের ঢাক বাজানোয় ভরসা করতে পারতেন না অনেকেই। তবে ধীরে ধীরে তাঁদের ঢাকের বোল মন কাড়ে সবার। বেশ কয়েক বছর ধরে পুজো পার্বণ ছাড়াও সারা বছরই কমবেশি নানা অনুষ্ঠানে ঢাক বাজানোর বরাত পাচ্ছেন তাঁরা। এমনকি, রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন্‌ রাজ্যের পুজোতেও ঢাক বাজানোর বরাত পাচ্ছেন তাঁরা। ওই মহিলাদের দাবি, কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা ফিরেছে পরিবারে। এ বার পুরুলিয়া, কলকাতার সল্টলেকের মণ্ডপে ঢাক বাজাবেন তাঁরা।

সুদপুর গ্রামের চিত্রা দাস জানান, জীবন যুদ্ধের মোকাবিলা করতে ঢাক কাঁধে তুলেছিলেন তিনি। আস্তে আস্তে প্রতিবেশী অভাবী ঘরের বধূদের নিয়ে ঢাকের দল তৈরি করেন। এখন আউরিয়া, বাজার বনকাপাশি গ্রামের কয়েকজন মহিলাও তাঁর দলে যোগ দিয়েছেন। পুজো প্যান্ডেল ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিয়ে, অন্নপ্রাশনে ঢাক বাজান তাঁরা। চিত্রা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পরে ছ’মাসের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি সুদপুরে চলে আসেন তিনি। প্রথমে পরিচারিকার কাজ করতেন। ২০১৪ সালে ঠিক করেন, অন্য কিছু করার কথা, তখন থেকেই ঢাক বাজানো শুরু। এটা যে পেশা হতে পারে, মেয়েরা যে এ ভাবে রোজগার করতে পারে, সে কথা প্রতিবেশী মহিলাদের বোঝান তিনি। এখন চিত্রার ১৪ জনের দল ত্রিপুরা, শিলচর, ওড়িশায় পাড়ি দেয় ঢাক নিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘শুরুটা খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু, হার মানিনি। আমরা প্রথমে ঋণ নিয়ে ঢাক কিনেছিলাম। প্রতিবেশী মহিলাদের আনতে অনেক ঝড়-ঝাপটা পোহাতে হয়েছিল। অনেকে কটূ কথাও শুনিয়েছেন। এখন আমাদের রাজ্য জুড়ে পরিচিতি বেড়েছে। গরিবের সংসারে বাড়তি রোজগার করি বলেই ছেলেমেয়ের হাতে নতুন পোশাক তুলে দিতে পারি।’’ তাঁরা জানান, দিন পিছু প্রত্যেকের এক হাজার টাকা করে আয় হয়। সন্ধ্যায় আশপাশের বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার যেন ক্ষতি না হয় তাই ঢাকের বদলে বালিশ নিয়ে অভ্যাস করেন তাঁরা।

জোৎস্না দাস, মিঠু দাস, প্রতিমা দাসেরা বলেন, ‘‘এখন মহিলারা সব কিছু করতে পারেন। অভাবের সংসারে ঘরে বসে থাকব কেন? তাই মায়ের পুজোয় ঢাক বাজানোকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি।’’ অনেকের স্বামী অসুস্থ। ওষুধপত্র কেনার খরচও ঢাক কাঁধেই জোগান তাঁরা।

চিত্রা ছেলে সীতারাম দাস বলেন, ‘‘করোনা আবহে দু’বছর সব বন্ধ ছিল। এ বার আবার মা-কাকিমারা ঢাক নিয়ে ছুটবেন পুজোয় দিনগুলোয়। তবে ওঁরা কেউই শিল্পী ভাতা পান না। পরিচয় পত্র পেলে সরকারি অনুষ্ঠানেও ডাক পেতে পারেন ওঁরা।’’

কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই গ্রামগুলির মহিলারা ঢাক বাজানোয় খুবই পারদর্শী। যতদূর জানি, ওঁদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছেআমাদের সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Katwa Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE