E-Paper

সেপটিক ট্যাঙ্কে মৃত্যু, শোকস্তব্ধ দুই পরিবার 

সুন্দরমের পরিজন ও পড়শিরা জানান, তাঁরা তিন ভাই। বড় ভাই সুবীর কয়েক বছর আগে রাজস্থানের জয়পুরে গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থায় কাজ করতে যান। সুন্দরম ও সত্যম যমজ ভাই।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩০
সেপটিক ট্যাঙ্কে মৃতের বাড়িতে মন্ত্রী মলয় ঘটক।

সেপটিক ট্যাঙ্কে মৃতের বাড়িতে মন্ত্রী মলয় ঘটক। —নিজস্ব চিত্র।

আর কয়েক দিন পরেই কলকাতার ট্যাংরার কাছে একটি পাঁচতারা হোটেলে কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল মাধবডিহির বড়বৈনান গ্রামের সুন্দরম মালিকের। আগামী শনিবার ছিল তাঁর জন্মদিন। সে দিন তিনি বাইশ বছরে পা দিতেন। কিন্তু তার আগেই, মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে কাজ করতে নেমে অচেতন হয়ে পড়া কর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়ে মৃত্যু হল তাঁর। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গ্রামে গাড়ি পাওয়া গেলে অন্তত ২০ মিনিট আগে আলমপুরে রায়না ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যেত ওই ঘটনায় অসুস্থদের। তাহলে হয়তো প্রাণও বাঁচানো যেত।

ওই গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত মালিকের বাড়িতে নির্মীয়মাণ সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢালাইয়ে ব্যবহৃত কাঠের পাটা ও বাঁশ খুলতে এসেছিলেন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, বাঁকুড়ার ফতেপুরের জয়দেব মাল। সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকার পর থেকে তাঁর আওয়াজ না পেয়ে বাড়ির ছোট ছেলে সুন্দরম ভিতরে ঢোকেন। তিনিও অচেতন হয়ে পড়েন। পড়শিদের চিৎকার শুনে কাছেই কালীমন্দিরের সামনে বসে থাকা আকাশ সাঁতরা-সহ কয়েক জন ছুটে যান। আরও তিন জন সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে নেমে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁদের সবাইকে উদ্ধার করে শিক্ষকদের যাতায়াতের একটি গাড়িতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলেও, ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জয়দেব, সুন্দরম ও আকাশকে মৃত বলে জানানো হয়। আলমপুরে ভর্তি থাকা জগন্নাথ মালিককে বুধবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যালে এখনও চিকিৎসাধীন অরূপ মালিক। এ দিন মৃতদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ময়না-তদন্ত হয়।

সুন্দরমের পরিজন ও পড়শিরা জানান, তাঁরা তিন ভাই। বড় ভাই সুবীর কয়েক বছর আগে রাজস্থানের জয়পুরে গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থায় কাজ করতে যান। সুন্দরম ও সত্যম যমজ ভাই। জয়ন্তের দু’আড়াই বিঘা জমি রয়েছে। মূলত ভাগচাষ করে সংসার চালান। মাটির বাড়ির পাশে পাকা বাড়ি তৈরি করছিলেন জয়ন্ত। সেই বাড়ির নির্মীয়মাণ সেপটিক ট্যাঙ্কেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

পড়শিদের একাংশের দাবি, সুবীরের ইচ্ছেতেই দুই ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে কলকাতার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেন। সত্যম আহমেদাবাদে চাকরি পান। তাঁর সঙ্গেই সুন্দরম সেখানে থাকতেন। গত জানুয়ারিতে গ্রামে ফিরে বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

বর্ধমান মেডিক্যালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে সুন্দরমের ঘনিষ্ঠ অপূর্ব হাজরা বলেন,‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে সুন্দরম ৯২% নম্বর পেয়েছিল। আর সাত-আট দিনের মধ্যে কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা, মানা যাচ্ছে না!’’ জানা গিয়েছে, বিদেশে চাকরির আশায় সুন্দরম পাসপোর্ট তৈরি রেখেছিলেন।

ঘটনার খবর পেয়ে আহমেদাবাদ থেকে বুধবার রাতেই বাড়ি ফিরেছেন সত্যম। পরিজনেরা বলেন, ‘‘শনিবারই সুন্দরমের জন্মদিন ছিল। তার পরেই সম্ভবত কাজে যোগ দিতে যেত। সুন্দরমের মা-বাবা কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। সত্যমও খুব ভেঙে পড়েছে।’’

ওই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই বছর সতেরোর আকাশের বাড়ি। মাধ্যমিক পাশ করার পরে বাবা রাজপ্রসাদ সাঁতরার সঙ্গেই আকাশ মণ্ডপসজ্জার কাজ করত। পরিজনেরা জানান, আকাশের ভাই সায়ন স্কুলে পড়ে। এই ঘটনার পরে পরিবারটি ভেঙে পড়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজ্য সরকারের তরফে ওই দু’টি বাড়িতে যান রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক শম্পা ধাড়া। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসেছি। আমরা পাশে আছি। শম্পাকেও পরিবারগুলি সম্পর্কে খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy