Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দশ মাস পরে বাড়ির পথে যুবক

শুক্রবার সকালে একটি ট্রাক নিয়ে দুর্গাপুরে হাজির হন প্রকাশের আত্মীয় মুন্না শঙ্করলাল পালিওয়াল।

বাড়ির পথে মহারাষ্ট্রের যুবক প্রকাশ বেদি। —নিজস্ব চিত্র

বাড়ির পথে মহারাষ্ট্রের যুবক প্রকাশ বেদি। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

উস্কোখুস্কো লম্বা চুল, একমুখ দাড়ি-গোঁফের নাম-পরিচয়হীন এক যুবক পড়েছিলেন রাস্তার ধারে বাসস্ট্যান্ডে। দশ মাস আগে তাঁকে ওই অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে নিজেদের কাছে রেখেছিলেন বিধাননগরেরই কয়েক জন। শেষমেশ শুক্রবার মহারাষ্ট্র থেকে আসা এক আত্মীয়ের হাতে প্রকাশ বেদি নামে মহারাষ্ট্রের ওই যুবককে তুলে দিতে পেরে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন তাঁরা।

শুক্রবার সকালে একটি ট্রাক নিয়ে দুর্গাপুরে হাজির হন প্রকাশের আত্মীয় মুন্না শঙ্করলাল পালিওয়াল। তিনি পেশায় পরিবহণ সংস্থার ট্রাক চালক। পূর্ব ভারতে ট্রাক নিয়ে এসেছিলেন। বাঁকুড়া রোড ওভারব্রিজের কাছে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন মুন্না। ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি হরিশঙ্কর যাদবের সহযোগিতায় শেষমেশ এ দিন তিনি দুপুর ১২টা নাগাদ পৌঁছন মহকুমা হাসপাতালের সামনে। মুন্নাই শ্যামের আসল নাম ও পরিচয় জানান।

মুন্নাই জানিয়েছেন, ওই যুবকের নাম, প্রকাশ বেদি। বয়স, ৩৩ বছর। ডাকনাম শ্যাম। তাঁর বাড়ি মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা জেলার হিংগনঘাটে। মধ্যপ্রদেশের ভূপালে একটি জামাকাপড় তৈরির কারখানার কর্মী ছিলেন তিনি। প্রকাশের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর মা মারা যান। ভাইয়ের সঙ্গে মিলে মায়ের পারলৌকিক কাজকর্ম সারেন তিনি। তার পরে কর্মক্ষেত্রের দিকে রওনা দেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা কর্মক্ষেত্রে যাননি তিনি। ফেরেননি বাড়িও। খোঁজখবর করেও বিশেষ লাভ হয়নি। মুন্না জানান, মায়ের মৃত্যুর পরে আংশিক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন প্রকাশ।

প্রকাশের দুর্গাপুরে আসা চলতি বছর জানুয়ারিতে। দুর্গাপুরের বিধাননগরে মহকুমা হাসপাতালের উল্টো দিকের বাসস্ট্যান্ডে নোংরা জামাকাপড় পরে থাকা অপরিচ্ছন্ন এক যুবককে শুয়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। তাঁকে উদ্ধার করেন বিধাননগর এলাকার বাসিন্দা মিনিবাস মালিক রবীন্দ্রনাথ সাহা, অমিয় নায়েক, পরিতোষ প্রামাণিক, মিনিবাসের কর্মী অমিত চক্রবর্তী, গাড়ি চালক অরূপ জানা’রা। যুবকটির চুল ছেঁটে, দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে স্নান করিয়ে নতুন জামা-কাপড় পরানো হয়। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয় মহকুমা হাসপাতালে। স্থানীয় একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া এবং স্ট্যান্ড লাগোয়া একটি ঘরে যুবকের থাকার ব্যবস্থা করে দেন তাঁরা। এ ছাড়া যখন যা প্রয়োজন ওই যুবককে তাঁরা কিনে দিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথবাবুরা জানান, প্রথম দিকে কথা বলতে চাইতেন না ওই যুবক। অনেক সাধ্যসাধনার পরে এক দিন ওই যুবক জানান, তাঁর নাম শ্যাম। তবে পদবি বা ঠিকানা, কিছুই বলতে পারেননি তিনি। জড়ানো হিন্দিতে মাঝে মাঝে বিড়বিড় করতেন। কিন্তু তাঁর কথা কেউই বুঝতে পারতেন না। তবে আকার-ইঙ্গিতে সব বুঝিয়ে দিতেন। নিজের জামা-কাপড় নিজেই কাচতেন। হোটেলে ভাত খেতে পছন্দ করতেন না। রুটি, পুরি, চা-বিস্কুট খেতেন। দিন তিনেক আগে তাঁকে কাগজ-কলম দিয়ে শ্যামকে ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে দিতে বলা হয়। প্রথমে ফোন নম্বর লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেললেও পরে তিনি তা শুধরে দেন। এরপরেই যোগাযোগ করা হয় মহারাষ্ট্রে, যুবকের পরিবারের সঙ্গে। সেখান থেকে মুন্নার সঙ্গে যোগাযোগ করেন পরিবারের লোকজন।

এ দিন আত্মীয়কে দেখে খুশি শ্যামও। মহকুমা হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরে পুলিশের উপস্থিতিতে শ্যামকে মুন্নার হাতে তুলে দেন রবীন্দ্রনাথবাবু, অমিতবাবু, পরিতোষবাবু’রা। ট্রাকে গিয়ে বসেন শ্যাম। শেষবারের মতো প্রকাশ হাত মেলান তাঁদের সঙ্গে, যাঁরা গত দশ মাস ধরে তাঁকে আগলে রেখেছিলেন। মুন্না বলেন, ‘‘এত দিন খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। দুর্গাপুরের মানুষকে ধন্যবাদ।’’ রবীন্দ্রনাথবাবু, পরিতোষবাবু’রা বলেন, ‘‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেল। এর চেয়ে আনন্দের আর কি থাকতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Youth Return Missing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE