Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবাধে চলছে পুকুর ভরাট, চিন্তায় প্রশাসন

মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার পরেও কাটোয়া শহরে পুকুর ভরাট রুখতে পারছে না ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর (বিএলএলআরও)। সঙ্গে জুড়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। শহর জুড়ে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্টার মেরেছে তৃণমূল, মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে। সিপিএমও বুধবার পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে পথসভা করেছে। অভিযোগ তুলেছে পুরসভা, পুলিশ, বিএলএলআরও এবং কাটোয়া মহকুমাশাসকের দিকে।

বাঁ দিকে, কাটোয়ার পানুহাটে চলছে মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করা। ডান দিকে, শহরে পুকুর ভরাট নিয়ে তৃণমূলের পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, কাটোয়ার পানুহাটে চলছে মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করা। ডান দিকে, শহরে পুকুর ভরাট নিয়ে তৃণমূলের পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার পরেও কাটোয়া শহরে পুকুর ভরাট রুখতে পারছে না ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর (বিএলএলআরও)। সঙ্গে জুড়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।

শহর জুড়ে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্টার মেরেছে তৃণমূল, মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে। সিপিএমও বুধবার পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে পথসভা করেছে। অভিযোগ তুলেছে পুরসভা, পুলিশ, বিএলএলআরও এবং কাটোয়া মহকুমাশাসকের দিকে। যদিও কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার কর্তাদের দাবি, অভিযোগ ঠিক নয়।

বিএলএলআরও দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর জুড়েই বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট চলছে। বিশেষ করে, শহরের শেষ প্রান্ত ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট করার প্রবণতা বেশি। আদর্শপল্লিতে কাটোয়া ১ বিএলএলআরও এবং মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আশপাশেও প্রতিনিয়ত একের পর এক পুকুর ভরাট হওয়ার অভিযোগ উঠছে। এর পাশাপাশি পুকুর পাড়ে বেআইনি নির্মাণেরও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রকাশ্যে এমন বেআইনি কাজ হতে দেখেও মহকুমা প্রশাসন কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছে। গত রবিবার কাটোয়া-দাঁইহাট রোডে শহরের চৌরঙ্গি মোড়ে একটি পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে পথে নেমেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারপরেই পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই কাজের পিছনে পানুহাটের কংগ্রেস নেতা বিকাশ চৌধুরীর ভাই মধু চৌধুরীর নাম উঠে আসে। কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া পুরসভা মধুবাবুকে পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সঙ্গে দখলদারদেরও উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।

কাটোয়া ১ বিএলএলআরও উজ্বল বিশ্বাস আক্ষেপ করে বলেন, “শহরের তিন-তিনটি পুকুর ভরাটের ঘটনায় এফআইআর করার পরেও মালিকরা পুকুর ভরাট করা থেকে পিছিয়ে আসেননি। এফআইআর করেও যদি পুকুর ভরাট রুখতে না পারি, তাহলে তো এই প্রবণতা দিন দিন বাড়বে।” ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের নতুন পুকুরের রাস্তার দিক ভরাট করে যাঁরা ঘর তৈরি করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর অভিযোগ করেছিলেন তৎকালীন বিএলএলআরও রমেশচন্দ্র গাইন। কিন্তু এক দিকে আদালতে মামলা চলছে, অন্য দিকে পুকুর ভরাটও চলছে। একই ঘটনা কাটোয়া থানা ভবন লাগোয়া মিঁয়া পুকুরের ক্ষেত্রেও। বিএলএলআরও দফতর স্থানীয় ৪৯ জনের নামে কাটোয়া থানায় পুকুর ভরাটের অভিযোগ করেছিল ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর। কিন্তু থানার সামনেই পুকুর ভরাট চলছে বলে স্থানীয়দের দাবি।

বিএলএলআরও দফতর লাগোয়া ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পানুহাট বসন্তপল্লীর সিঙের পুকুর ভরাট করার অভিযোগও উঠেছিল পুকুর মালিকদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিএলএলআরও দফতরে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ওই পুকুরের এক মালিক বরুণ দেবনাথকে নোটিস দেয় ওই দফতর। গত ১২ জানুয়ারি বরুণবাবু কাটোয়া ১ বিএলএলআরও দফতরে পুকুর ভরাট করবেন না বলে লিখিত মুচলেকাও দেন। কিন্তু তারপরেও পুকুর ভরাট করছে চলছে বলে ওই পুকুরের সাত মালিকের বিরুদ্ধে কাটোয়া থানায় ১৫ জানুয়ারি অভিযোগ দায়ের করেন বিএলএলআরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চলতি সপ্তাহে পরপর বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর এসে পুকুরে মাটি ফেলে গিয়েছে। এ ছাড়াও শহরের স্টেশন বাজার, দক্ষিণ পালপাড়া, মাধাইতলা-সহ অন্তত ৮ থেকে দশটি জলাশয় ভরাটের কথা জানা গিয়েছে। এমনকী হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও রুদ্র মার্কেট লাগোয়া পুকুরটিকে মালিক কিংবা প্রশাসন জলাশয়ে পরিণত করেনি বলে খবর।

কাটোয়া মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা বলেন, “শহরের পুকুর ভরাটের বর্তমান অবস্থা মহকুমাশাসককে জানিয়ে এসেছি। পুলিশ যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় সে দাবিও করেছি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল প্রশাসন আমাদের সে ভাবে সাহায্য করছে না।”

এমনিতেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের কোনও পকুর পাড়েই গার্ডওয়াল দেওয়া নিষিদ্ধ। সেখানে কাটোয়াতে পুকুর পাড়ে বড় বড় বাড়ি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবিদদের মত, জলাশয় বোজানো হলে বিপদ বাড়বে। টান পড়বে ভূগর্ভস্থ জলে। আর্সেনিক বা ফ্লোরাইডের মতো বিষাক্ত পদার্থ জলে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন মানুষই। আবার পুকুর পাড়ে বাড়ি তৈরি হলে বাড়িগুলির নোংরা, বর্জ্য মিশবে পুকুরে। তা থেকে জল দূষিত তো হবেই, নাব্যতা কমে অচিরেই পুকুরটি মজে যাবে।

রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও এ নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের কাটোয়া শহরের সভাপতি অমর রামের সাফ অভিযোগ, “কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার মদতে শহর জুড়ে পুকুর ভরাট চলছে। এ নিয়ে আমরা স্মারকলিপিও দিয়েছি।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়েরও দাবিগ, “একটা চক্র কাজ করছে। আর সেখানে প্রশাসনের সবাই অন্ধ হয়ে বসে রয়েছে।” যদিও কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায় বলেন, “এই সব বেআইনি কাজ পুরসভা ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। পুকুর ভরাট রোখারও চেষ্টা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

katoa soumen dutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE