ডিপিএলকে অন্য সরকারি বিদ্যুত্ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে অবশেষে কর্মী সংগঠনগুলির মতামত জানতে উদ্যোগী হলেন ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ সব ক’টি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কোকওভেন প্ল্যান্টের ভবিষ্যত্ কী হবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে অধিকাংশ সংগঠনই। পাশাপাশি, নতুন ব্যবস্থায় কর্মীদের আর্থিক সুবিধা সুরক্ষিত থাকবে কি না, হাসপাতাল, ঋণ সমবায় ইত্যাদির ভবিষ্যত্ কী হবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে তারা। ডিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃণালকান্তি মৈত্র গুরুত্বের সঙ্গে সব বিষয় বিবেচনার আশ্বাস দেন।
আর্থিক সঙ্কটে পঙ্গু হতে বসা ডিপিএলকে রাজ্যের অন্য বিদ্যুত্ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল ডিপিএলের পরিচালন সমিতি। কিন্তু তার আগে এ নিয়ে কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। এমনকী, বর্তমান কর্মীরা কে কোন সংস্থায় এবং রাজ্যের কোথায় বদলি হতে ইচ্ছুক, তা জানতে বিজ্ঞপ্তি দেন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কারখানার একাধিক শ্রমিক সংগঠন ও কর্মী-আধিকারিকেরা। ডিপিএলকে অন্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল আইএনটিটিইউসি-র দুটি সংগঠনের একটি। কিন্তু সেই সংগঠনের ভিতরেও এ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ডিপিএল কর্তৃপক্ষ কর্মী সংগঠনগুলির মতামত জানতে বৈঠক ডাকেন।
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটু এবং আইএনটিইউসি সংস্থাকে অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে কোকওভেন প্ল্যান্টের ভবিষ্যত্ নিশ্চিত করার দাবি জানায়। সিটু অনুমোদিত ‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সভাপতি নরেন শিকদার বলেন, “কোকওভেন প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণ জরুরি। নতুন ব্যবস্থায় কর্মীদের স্বার্থ কতটা সুরক্ষিত থাকবে তার নিশ্চয়তা দরকার। একরের পর একর দামি জমি রয়েছে ডিপিএলের। তার কী হবে?” আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘ডিপিএল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক উমাপদ দাস বলেন, “কোকওভেন প্ল্যান্টে দক্ষ ও অদক্ষ মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার কর্মী আছেন। বিদ্যুত্ কোকওভেন প্ল্যান্ট কী ভাবে চালু রাখা হবে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।” বৈঠকে যোগ দেয়নি আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’। এর কার্যকরী সভাপতি অমর মণ্ডল বলেন, “ডিপিএল বাঁচাতে যে কোনও উদ্যোগ স্বাগত। কিন্তু এত তাড়াহুড়ো কীসের বোঝা যাচ্ছে না।” তাঁর দাবি, কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ করলে ডিপিএল নিজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অন্য সংগঠন ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মজুমদারের আবার দাবি, “অন্য সংস্থার সঙ্গে মেশালেই একমাত্র ডিপিএল বাঁচতে পারে।”
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানা ও গৃহস্থালীর বিদ্যুত্ সরবরাহের জন্য ১৯৬০ সালে গড়ে ওঠে ডিপিএল। বর্তমানে একমাত্র সপ্তম ইউনিটটি উত্পাদনক্ষম। গত অর্থ বর্ষে ডিপিএলের লোকসান হয়েছিল ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বর্ষে এখনই তা ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি শোধরাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডিপিএল পরিদর্শনের সময় বিদ্যুত্ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত জানান, সংস্থার অব্যবহৃত জমিতে বহুতল আবাসন, আইটি পার্ক, শপিং মল ইত্যাদি গড়ে তা থেকে আয় করে লোকসান এড়াবে সংস্থা। কোকওভেন প্ল্যান্টের ব্যাটারির উন্নতিকরণ এবং তিনশো মেগাওয়াটের প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত একটি নতুন ইউনিট গড়া হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করার মতো পরিস্থিতি আর নেই আন্দাজ করে গত ১৬ জুন ডিপিএলের পরিচালন সমিতি সংস্থাটিকে ১ নভেম্বর থেকে অন্য সরকারি বিদ্যুত্ সংস্থাগুলির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে সিলমোহর দেয়। সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে রাজ্য বিদ্যুত্ উন্নয়ন নিগম ১১ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গড়ে। কমিটি ডিপিএল পরিদর্শন করে নিগমকে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। নিগম এখনও পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেনি। মঙ্গলবার কারখানার কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে যোগ দেন বহু সাধারণ কর্মীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy