দাপাদাপি। দুর্গাপুর ব্যারাজ লাগোয়া সেচ খালে। ছবি- বিশ্বনাথ মশান।
বাবা-মায়ের ইচ্ছে ঘরের ছেলে-মেয়েরা পারদর্শী হয়ে উঠুক ইংরেজিতে। আর সেই ইচ্ছেপূরণ করতে গিয়ে কোনও কিছু যাচাই না করেই অভিভাবকদের একটা বড় অংশই ছুটছেন অনুমোদনহীন স্কুলগুলির দিকে। দুর্গাপুরের বিধাননগরের একটি স্কুলের অনুমোদন না থাকার ঘটনা সামনে আসতেই শহরের শিক্ষাবিদদের একাংশের ধারণা অন্তত এমনটাই।
সম্প্রতি দুর্গাপুরের বিধাননগরের একটি স্কুলে প্রায় আটশো ছাত্র ভর্তি হয়। পরে জানা যায়, স্কুলটির কেন্দ্রীয় বোর্ডের (সিবিএসই) অনুমোদনই নেই। ওই ঘটনার খবর চাউর হতেই জেলাশাসকের নির্দেশে তড়ঘড়ি একটি তদন্ত কমিটিও তৈরি করা হয়। তদন্ত শেষে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক জানান, আপাতত ওই স্কুলে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। ক্লাস চলবে প্রশাসনের নজরদারিতে।
ওই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই শহরের শিক্ষাবিদরা প্রশ্ন তোলেন, এমন ভাবে অনুমোদনহীন স্কুলে পড়ুয়াদের ভর্তি করার আগে অভিভাবকেরা কেন সব দিক যাচাই করেননি? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ওই স্কুলটিই নয়। কমলপুর ও বিধাননগরের মতো বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন অনুমোদনহীন স্কুল রয়েছে। সিবিএসই-র ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দুর্গাপুরের মোটে ১২টি স্কুলেরই অনুমোদন রয়েছে। এক শিক্ষাবিদ জানান, ওই তালিকায় নজরে পড়েনি কমলপুর ও বিধানগরের স্কুল দু’টির নামও।
অনুমোদন না থাকলেও শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় গজিয়ে ওঠা স্কুলগুলিতে ক্লাস কিন্তু চলছে হইহই করে। শিক্ষাবিদদের অভিযোগ, এই স্কুলগুলিতে ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করানোর আগে সবদিক যাচাই করেন না অভিভাবকেরা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদ আর ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার তাগিদ থেকেই অভিভাবকেরা এমনটা করছেন বলে ধারণা শিক্ষাবিদদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকও বলেন, ‘‘স্কুল সম্পর্কে খোঁজ নিইনি। চার দিকেই তো বিজ্ঞাপন রয়েছে!’’ মেয়েকে ইংরেজি শেখানোর ইচ্ছে ছিল। তাই এমন একটি অনুমোদনহীন স্কুলে ভর্তি করেছেন বলে জানান ওই অভিভাবক।
সিবিএসই-র নির্দেশিকা অনুসারে অনুমোদনহীন স্কুলগুলি সপ্তম শ্রেণির উপরে আর ছাত্র ভর্তি করতে পারবে না। কমলপুর ও বিধাননগরের ওই স্কুলগুলিতে অবশ্য সে নিয়ম লঙ্ঘিত হয়নি বলেই স্কুল সূত্রে খবর। তবে এই স্কুলের পড়ুয়ারা দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেয় কী ভাবে? অভিভাবকেরা জানান, সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুল থেকে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
পড়ুয়াদের একাংশ জানায়, যখন জানতে পারা যায় স্কুলের অনুমোদন নেই, তখন অনিশ্চয়তার শঙ্কা চেপে বসে। দুর্গাপুর উওমেনস কলেজের অধ্যক্ষ মধুমিতা জাজড়িয়া বলেন, ‘‘শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা চলছে। অভিভাবকদের বিজ্ঞাপনের চটক না দেখে স্কুলের গুণমান দেখা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy