Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সাঁতুড়ির স্কুলে বিরোধ

ইস্তফা দিতে চাইলেন ক্ষুদ্ধ প্রধান শিক্ষক

নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার প্রায় দেড় মাস কাটলেও আগের টিচার-ইন-চার্জ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না, এই অভিযোগে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির ঢাকশিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ওই টিচার-ইন-চার্জ তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ওই প্রধান শিক্ষক সম্প্রতি ইস্তফার চিঠি দিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁতুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার প্রায় দেড় মাস কাটলেও আগের টিচার-ইন-চার্জ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না, এই অভিযোগে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির ঢাকশিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ওই টিচার-ইন-চার্জ তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ওই প্রধান শিক্ষক সম্প্রতি ইস্তফার চিঠি দিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির কাছে। একই সঙ্গে ঢাকশিলা স্কুল থেকে নিজের পুরানো স্কুলে যাওয়ার জন্যও আবেদন করেছেন পরিচালন সমিতির কাছে।

আজ সোমবার এই বিষয়ে পরিচালন সমিতির সভা হওয়ার কথা। প্রধান শিক্ষক গণেশ মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ। পরিচালন সমিতি যাতে প্রধান শিক্ষকের ইস্তফা না মানে, সেই দাবিতে শনিবার স্কুলের সামনে বিক্ষোভও দেখান শতাধিক অভিভাবক। তাঁদের বক্তব্য, দুই শিক্ষকের চাপানউতোরে স্কুলের পরিবেশের উপরে প্রভাব পড়ছে। চার বছর ধরে ঢাকশিলা স্কুলে কোনও স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই। এখন প্রধান শিক্ষক পাওয়ার পরেও তিনি চলে গেলে স্কুলের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কোনও মতেই স্কুল ছেড়ে যাওয়া চলবে না ওই প্রধান শিক্ষকের, এমনই দাবি ওই অভিভাবকদের।

এ বছর ১ অগস্ট বাঁকুড়ার জোড়হিড়া স্কুল থেকে সাঁতুড়ির ঢাকশিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন গণেশবাবু। বাঁকুড়ারই শালতোড়ার বাসিন্দা গণেশবাবু জোড়হিড়া স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কাজ করতেন। প্রধান শিক্ষকের পরীক্ষা দিয়ে তিনি ঢাকশিলায় এসেছেন। স্কুল সূত্রের খবর, যোগ দেওয়ার পরে স্কুলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে স্কুলের আগের টিচার-ইন-চার্জ (টিআইসি) তথা তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের স্থানীয় নেতা তরুণকান্তি মুখোপাধ্যায়ের। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বার প্রকাশ্যেই বিবাদে জড়িয়েছেন ওই দুই শিক্ষক। গণেশবাবুর অভিযোগ, ঢাকশিলায় যোগ দেওয়ার পরে স্কুলের দায়িত্ব-সহ প্রয়োজনীয় নথি তিনি বহুবার চেয়েছেন তরুণকান্তিবাবুর কাছে। কিন্তু তিনি বারবার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবই ও চেকবই দিয়েছেন। কিন্তু অন্য কোনও নথি চাইছেন না।

গণেশবাবু বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব নেওয়ার দিনই আগের টিআইসি স্কুলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি প্রধান শিক্ষককে দেবেন। সমস্যা হলে কয়েক দিন দেরি হতে পারে। কিন্তু, দেড় মাস পরেও উনি কিছুই দিতে চাইছেন না। বিষয়টি যখনই তাঁর কাছে বলেছি, তখনই ভাল ব্যবহার পাইনি।”

এই অভিযোগ মানতে চাননি তরুণকান্তিবাবু। তিনি বলেন, “গণেশবাবু দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরেই সমস্ত বিষয় তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছি। স্কুলের তহবিলের কিছু নথি অডিটের জন্য দেওয়া রয়েছে। তাই সেগুলি দিতে পারিনি। কিন্তু, পরিচালন সমিতির বৈঠকে গণেশবাবুকে বলেছি, দ্রুত সেগুলিও দিয়ে দেব।” পুরো বিষয়টি নিয়ে গণেশবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন বলেও দাবি সদ্য প্রাক্তন টিআইসি-র।

গণেশবাবুর আরও অভিযোগ, “স্কুলে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে এখানে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া, তৃণমূলের একাংশ থেকেও বিভিন্ন বিষয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে আগের স্কুলে ফিরতে চাইছি।” স্কুলের কিছু অভিভাবকও বলছেন, “প্রধান শিক্ষকের উপরে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নেব না।”

রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, “আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধী। ঢাকশিলা স্কুলের বিষয়টি পুরোপুরি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে দুই শিক্ষকের নিজেদের সমস্যা। কোনও রাজনীতি এর মধ্যে নেই।” প্রধান শিক্ষকের ইস্তফার ইচ্ছা প্রসঙ্গে বিধায়কের মন্তব্য, “উনি যদি এখানে থাকতে না চান, তা হলে জোর করে তো তাঁকে আটকানো সম্ভব নয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

head master resign Santuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE