Advertisement
১৮ মে ২০২৪

উন্নয়নের টাকা তছরুপে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক

স্কুলের উন্নয়ন খাতে দফায় দফায় পাওয়া অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠেছে আউশগ্রামের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প অফিসার ভাস্কর পাল জানান, ২০০৪-০৫ থেকে ২০১২-১৩ বর্ষের মধ্যে ওই স্কুলকে নানা খাতে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও আউশগ্রাম হাইস্কুলের ওই শিক্ষক শেখ সাদরে আলম সেই টাকা খরচের নথিপত্র পেশ করেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

স্কুলের উন্নয়ন খাতে দফায় দফায় পাওয়া অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠেছে আউশগ্রামের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প অফিসার ভাস্কর পাল জানান, ২০০৪-০৫ থেকে ২০১২-১৩ বর্ষের মধ্যে ওই স্কুলকে নানা খাতে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও আউশগ্রাম হাইস্কুলের ওই শিক্ষক শেখ সাদরে আলম সেই টাকা খরচের নথিপত্র পেশ করেননি। তাই শুক্রবার আউশগ্রাম ২ চক্রের স্কুল পরিদর্শককে (এসআই) ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রধান শিক্ষকের অবশ্য দাবি, বিশদ রিপোর্ট তৈরির জন্য তিনি কিছু দিন সময় চেয়েছিলেন। ভাস্করবাবুরা তা দিতে নারাজ। সে কারণেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

কিন্তু জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, আউশগ্রাম ২ চক্রের এসআই ওই নির্দেশ হাতে পেয়েও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশে এখনও অভিযোগ করেননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তবে এসআই নিজামুদ্দিন এই অভিযোগ না করার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা স্কুল পরিদর্শক অপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তছরুপের অভিযোগ রয়েছে বলে আমি জানি। তবে কেন ওঁর বিরুদ্ধে এখনও এফআইআর করা হয়নি, তা বলতে পারব না।” প্রকল্প আধিকারিক ভাস্করবাবুর বক্তব্য, “এসআই হয়তো ভয় পেয়ে এফআইআর করা সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ। তবে কয়েক দিন অপেক্ষা করে আমরাই এফআইআর করব।”

জেলা সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪-০৫ থেকে ২০১২-১৩ সালের মধ্যে বইয়ের অনুদান, ভবন তৈরি ইত্যাদির মতো উন্নয়ন খাতে ওই স্কুলটিকে সব মিলিয়ে ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা খরচের হিসেব পেশ করেননি প্রধান শিক্ষক। তাঁকে ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত সাতটি চিঠি দিয়ে সরকারি তহবিলের খরচের হিসেব চাওয়া হয়েছিল। চলতি বছর ৩ ফেব্রুয়ারি জেলা সর্বশিক্ষা মিশন থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, যদি ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই চার বছরে প্রাপ্ত তহবিলের হিসেব দিতে না পারেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগে এফআইআর-ও করা হবে। কিন্তু তার পরেও ২৪ লক্ষ টাকার পূর্ণাঙ্গ হিসেব ওই প্রধান শিক্ষক পেশ করেননি বলে অভিযোগ।

জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প অফিসার ভাস্করবাবু বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলে কিছু কাজ হয়েছে বলে উল্লেখ করে আমাদের কাছে মাঝে একটি হিসেব পেশ করেছিলেন। ওই হিসেব দেখে প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হয়েছে, সেটি জাল ও জোর করে হিসেব মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার চাওয়া হলেও উনি খরচ সংক্রান্ত কোনও ভাউচার পেশ করতে পারেননি। নির্দিষ্ট অডিট রিপোর্টও দিতে পারেননি। স্কুলের যে কাজগুলি হয়েছিল, আমরা ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখেছি, সেগুলি মোটেই ২৪ লক্ষ টাকার নয়। বাধ্য হয়ে আমরা শুক্রবার ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে নির্দেশ দিয়েছি এসআই-কে।”

জেলা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রথীন মল্লিকের দাবি, “ওই প্রধান শিক্ষক বাম জমানায় নানা দুর্নীতি করে পার পেয়েছেন। এ বার ওঁর বিরুদ্ধে আউশগ্রাম ২ চক্রের এসআই এখনও থানায় এফআইআর করেননি। আমাদের সন্দেহ, এই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার আমরা আউশগ্রামে এসআইয়ের অফিস ঘেরাও করব।”

প্রধান শিক্ষক সাদরে আলম অবশ্য বলেন, “একটি হিসেব পেশ করেছিলাম। তাতে ওঁরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় আমি ওই টাকা খরচের খুঁটিনাটি একটি হিসেব তৈরি করতে চাই। তার জন্য কিছু দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাস্করবাবুরা আমাকে সে সময় দিতে নারাজ। তাই সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bardwan money laundering development of teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE