Advertisement
E-Paper

এগোচ্ছে দামোদর, আতঙ্কে ভুগছে গ্রাম

বছর কয়েক আগেও যে জায়গায় ফসল ফলত এখন সেখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দামোদর। ক্রমেই ভেঙে যাচ্ছে নদের পাড়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বার বার জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ভাবেই ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন কাঁকসা ও গলসি ১ নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।

বিপ্লব ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
ভাঙছে পাড়। বুদবুদের অমরপুর গ্রামে বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।

ভাঙছে পাড়। বুদবুদের অমরপুর গ্রামে বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।

বছর কয়েক আগেও যে জায়গায় ফসল ফলত এখন সেখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দামোদর। ক্রমেই ভেঙে যাচ্ছে নদের পাড়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বার বার জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ভাবেই ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন কাঁকসা ও গলসি ১ নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় প্রতি বছরই আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে দামোদর। এই নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে আস্ত চাষের জমি। গত কয়েক বছর ধরেই এই পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছেন কাঁকসার সিলামপুর, গলসি ১ নম্বর ব্লকের কসবা, মানা, অমরপুর, নবঘণ্ট, বিড়িনপুরের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, দামোদর পাড়ের ভাঙন রুখতে প্রশাসন শীঘ্রই ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতেই তাঁদের এলাকা ছাড়তে হবে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমরপুর, নবঘণ্ট, বিড়িনপুর গ্রাম থেকে এখন দামোদরের দূরত্ব মেরেকেটে মাত্র ৫০ মিটার। এই এলাকার অধিকাংশ গ্রামবাসীই পেশায় কৃষিজীবী। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দামোদরের ওপারে বাঁকুড়ায় বালির বাঁধ দেওয়ার ফলে গতিপথ পাল্টেছে দামোদর। এখন তা বয়ে চলেছে গলসি ১ নম্বর ব্লকের ওই গ্রামগুলির পাশ দিয়ে। ফলে গ্রামবাসীরা এক সময় যেখানে চাষ করতেন, বর্তমানে সেখানে শুধুই জল। এলাকাবাসীর দাবি, নদীর জল সামান্য বাড়লেই তাঁদের রাতের ঘুম উড়ে যায়।

অমরপুরের বাসিন্দা মলয় পালের আশঙ্কা, “এভাবে চলতে থাকলে নদীর পাড়ে থাকা সব কটি গ্রামের জমি ও গ্রাম বিপন্ন হয়ে পড়বে।” অমরপুর গ্রামের চোঙপাড়া এলাকায় নদী প্রায় গ্রামে ঢুকে এসেছে। ওই এলাকার বাসিন্দা সুকনাথ বাগদি, তরণী বাগদিরা জানান, মাঝে মধ্যেই কানে আসে পাড় ভাঙার শব্দ। দামোদরের পাড় ভাঙতে ভাঙতে যে কোনও দিন এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যখন গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়বে জল। তখন বহু পরিবারের গ্রামছাড়া হওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকবে না। প্রায় একই অবস্থা গলসি ১ নম্বর ব্লকের কসবার মানা এলাকাতে। ওই এলাকার বাসিন্দা মধুসূদন বল্লভ জানান, ইতিমধ্যেই দামোদরের জল ঢুকে প্রচুর ফুলকপি ও ধানের চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বীজ বিক্রেতা শেখর বিশ্বাস বলেন, “নতুন করে পাড় ভেঙে বহু চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ভাঙন আটকাতে স্থানীয় বাসিন্দারাই বালির বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। জানি না কতদিন এভাবে চলবে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দামোদরের পাড় থেকে নিয়মিত চলছে অবৈধ ভাবে বালি খনন। তার ফলেই গতিপথ পাল্টে দামোদর বসতি এলাকায় ঢুকছে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নরেশ কোনারের দাবি, “এলাকার অধিকাংশ মানুষই চাষের উপর নির্ভরশীল। তাঁদের একের পর এক জমি দামোদরে চলে গেলেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা পুরো বিষয়টি লিখিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি।” যদিও প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে গলসির বিধায়ক গৌর মণ্ডল বলেন, “নদীবাঁধের কাজ চলছিল। বর্ষা নামার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।” কাঁকসার সিলামপুর এলাকাটি দুর্গাপুর পূর্বের বিধানসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত। এই কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে আগেও উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। আবার নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

দামোদর পাড়ের বাসিন্দাদের প্রার্থনা, সেই পদক্ষেপ হোক খুব দ্রুত।

biplab bhattacharya kanksa damodar river erosion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy