একেবারে বাঁধের গা বেয়ে বইছে ভাগীরথী। যে কোনও সময়ে নদীর গর্ভে চলে যেতে পারে বাঁধের একাংশএই আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাদের ঘুম ছুটেছে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার ওই বাঁধ পরিদর্শন করে সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।
দাঁইহাট শহর থেকে চৌধুরীপাড়া হয়ে ভাগীরথী বাঁধটি অগ্রদ্বীপের চর সাহাপুরের ভিতর দিয়ে রঘুনাগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। সেচ দফতরের এই বাঁধটি খুবই দুর্বল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন। তাঁদের যুক্তি, প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে দাঁইহাট শহরের চৌধুরীপাড়ার কাছে বাঁধটির কোনও না কোনও অংশ ভাগীরথীতে তলিয়ে যায়। গত বছর চৌধুরীপাড়া থেকে দাঁইহাটের ফেরিঘাট পর্যন্ত সেচ দফতর বাঁধটি সংস্কার করে। তার ফলে বাঁধের ওই অংশ এ বার ভাগীরথীর হাত থেকে বাঁচলেও চর সাহাপুর এলাকায় গত ১৫ দিন ধরে ভাঙনের জন্য ভাগীরথী একেবারে বাঁধের গায়ে চলে এসেছে। সেচ দফতরের হিসেব মত, ভাগীরথী থেকে বাঁধের দূরত্ব ১০-১৫ মিটার। এর মধ্যে ভাগীরথীর জল বাড়লে বাঁধ রক্ষা করা অসম্ভব বলে সেচ কর্তারা মনে করছেন।
অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা যে ভাবে ভাঙন দেখতে অভ্যস্ত, সে রকম ভাবে চর সাহাপুরে ভাঙন হচ্ছে না। এখানে ভাগীরথীর জল ঢুকে জমির পর জমিতে ধস নামাচ্ছে।” চর সাহাপুর গ্রামে চারশো পরিবারের বাস। এখানকার বাসিন্দাদের মূল জীবিকা কৃষিকাজ। ভাগীরথীর পাড়ে এই সময়ে পাট ও সব্জি চাষই ভরসা গ্রামবাসীদের। বাসিন্দাদের কথায়, গত দু’সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাঙনে বিঘের পর বিঘে জমি ভাগীরথীতে ডুবে যেতে দেখছেন তাঁরা। ফলে, এখন ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামবাসীরা। চরসাহাপুরের বাসিন্দা বিধান মণ্ডল, সরস্বতী চৌধুরীরা বলেন, “গায়ের রক্ত জল করে পাট লাগিয়েছিলাম। সেটাও চলে গেল। এ বার খাব কী, সেটাই চিন্তা!” পাঁচু বিশ্বাস, কার্তিক বিশ্বাসেরা দাবি করেন, “গত দু’বছর ধরে ভাঙনের কোপ খুব বেশি। গত কয়েক দিনে এক একটি পরিবারের বিঘের পর বিঘে জমি ভাগীরথীতে চলে গিয়েছে। আমাদের এখন কয়েক কাঠা জমি বেঁচে আছে। জীবিকা নির্বাহ করব কী ভাবে, সেটাই মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা তন্ময় প্রামাণিক বলেন, “নদিয়ার দিকে ভাগীরথীর উপরে চর জেগে ওঠায় আমাদের দিকে ভাঙনের প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে।” কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার অগ্রদ্বীপ থেকে ফিরে বলেন, “সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই এলাকায় যাতে স্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধের কাজ করা যায়, তার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।” সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অগ্রদ্বীপে বাঁশের খাঁচা ফেলার কাজ চলছে। সেখান থেকে কিছু খাঁচা চর সাহাপুরে ফেলে আপাতত ঠেকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঠেকা দিয়ে কী ভাঙন রোখা যাবে? গেলেই বা কতক্ষণ? এই বাঁধ ভাঙলে দাঁইহাট শহর-সহ কাটোয়া ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে। তাই, ভাগীরথীর এগিয়ে আসা দেখে রীতিমতো আতঙ্কে এলাকাবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy